Monday, July 6, 2020

বাংলাদেশের সকল দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানুন পিডিএফ ডাউনলোড

বাংলাদেশের সকল দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানুন
পিডিএফ ডাউনলোড


বাংলাদেশের সকল বিভাগের দর্শনীয় স্থান গুলো
খুলনা বিভাগ
ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এই বনভূমি গঙ্গা ও রূপসা নদীর মোহনায় অবস্থিত সমুদ্র উপকূল তথা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। ২০০ বছর পূর্বে সুন্দরবনের প্রকৃত আয়তন ছিলো প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কিলোমিটার যা কমে এখন ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে এই সুন্দরবনের ৬,০১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ সীমানায়। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য বলে স্বিকৃতি দেয়ায় সুন্দরবন এখন বিশ্ব মানবতার সম্পদ। ধারনা করা হয় সুন্দরী গাছের নামানুসারেই সুন্দরবনের নাম করন হয়েছে। এই বনে সুন্দরী গাছ ছাড়াও, গেওয়া, কেওড়া, বাইন, পশুর, গড়ান, আমুরসহ ২৪৫ টি শ্রেণী এবং ৩৩৪ প্রজাতির গাছ রয়েছে। পৃথিবীতে মোট ৩টি ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবন সর্ববৃহৎ। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীব-বৈচিত্র্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবহমান কাল ধরে আর্কষন করে আসছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, খালের পাড়ে শুয়ে থাকা কুমির এবং বানরের দল পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ করে।

ষাট গম্বুজ মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। ধারণা করা হয়,১৫শ শতাব্দীতে খান-ই-জাহান এটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটির মধ্যে অবস্থিত; বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮৫ ফুট পুরু। মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়, গম্বুজ, ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি। পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তি সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মত। বাকি ৭০টি গম্বুজ আধা গোলাকার।

রাজশাহী বিভাগ
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়। এটি ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্মচর্চা কেন্দ্র ছিল। শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, চীন, তিব্বত, মায়ানমার ( তদানীন্তন ব্রহ্মদেশ), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা ও ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন।
খ্রিষ্টীয় দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। ৭ম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে হিউয়েন ৎসাং পুন্ড্রবর্ধনে আসেন ও তার বিস্তারিত বিবরণে সোমপুরের বিহার ও মন্দিরের কোন উল্লেখ নেই। গোপালের পুত্র ধর্মপাল (৭৮১ - ৮২২ খ্রি) সিংহাসনে আরোহণ করে দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন ও রাজ্যকে বাংলা বিহার ছাড়িয়ে পাকিস্তানের উত্তর - পশ্চিম সীমান্তের গান্ধার পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। সম্রাট ধর্মপাল অনেক নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ ছিলেন ও তিনিই বিক্রমশীলা ও সোমপুর বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। অন্য মতে, বিখ্যাত তিব্বতীয় ইতিহাস গ্রন্থ "পাগ সাম জোন ঝাং" এর লেখক অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ধর্মপালের পুত্র দেবপাল (৮১০-৮৫০)কর্তৃক সোমপুরে নির্মিত বিশাল বিহার ও সুউচ্চ মন্দিরের উল্লেখ করেছেন।

সোমপুর বিহারের ভিক্ষুরা নালন্দা, বুদ্ধগয়া প্রভৃতি ভারতীয় বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থানে অর্থ ও ধন রত্ন দান করতেন বলে বিভিন্ন লিপিতে উল্লেখ করা আছে যা ১০ - ১১শ শতাব্দীতে সমৃদ্ধশীল অবস্থার ইঙ্গিত বহন করে। পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্ড্রনগর (বর্তমান মহাস্থানগড়) এবং অপর শহর কোটিবর্ষ (বর্তমান বানগড়)এর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছিল সোমপুর মহাবিহার। এর ধ্বংসাবশেষটি বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজশাহীর অন্তর্গত নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। অপর দিকে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে এর দূরত্ব পশ্চিমদিকে মাত্র ৫ কিমি। এটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত, প্লাইস্টোসীন যুগের বরেন্দ্র নামক অনুচ্চ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। মাটিতে লৌহজাত পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাটি লালচে। অবশ্য বর্তমানে এ মাটি অধিকাংশ স্থানে পললের নিচে ঢাকা পড়েছে। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০.৩০ মিটার উচুতে অবস্থিত পাহাড় সদৃশ স্থাপনা হিসেবে এটি টিকে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন একে 'গোপাল চিতার পাহাড়' আখ্যায়িত করত। সেই থেকেই এর নাম হয়েছে পাহাড়পুর, যদিও এর প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। এটি প্রত্ন সংগ্রহে সমৃদ্ধ। এই প্রত্ন সংগ্রহশালাটি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এটি পরিচালনা করে থাকে। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী মহানগরের কেন্দ্রস্থল হেতেম খাঁ-তে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা। বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্র এবং রাজশাহী কলিজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্রের উল্লেখযোগ্য আবদান রয়েছে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তারা বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন।
ঐ বছরে তারা রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। এই নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করার জন্য শরৎ কুমার রায়ের দান করা জমিতে জাদুঘরটির নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে। একই বছরের ১৩ নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা জাদুঘর অকস্মাৎ এতে সংরক্ষিত সকল নিদর্শন দাবি করে বসে। তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেলের প্রচেষ্টায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারী তারিখে জারীকৃত একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বরেন্দ্র জাদুঘরকে এর নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যপারে স্বাধীকার প্রদান করা হয় বরেন্দ্র জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারেরও অধিক।

এখানে হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। মহেনজোদারো সভ্যতা থেকে সংগৃহীত প্রত্নতত্ত, পাথরের মূর্তি, খিষ্ট্রীয় একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধু মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গা মূর্তি সহ অসংখ্য মূর্তি এই জাদুঘরের অমূল্য সংগ্রহের অন্তর্ভুত। মোঘল আমলের রৌপ্র মুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা বিশেষ ভাবে উল্যেখয়োগ্য। এখানে প্রায় ৫০০০ পুঁথি রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৪৬টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলায় রচিত। পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পযর্ন্ত সময় পরিধিতে অঙ্কিত চিত্রকর্ম, নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদ দৌলার অঙ্কিত চিত্র এখানে রয়েছে। নওগাঁর পাহাড়পুর থেকে উদ্ধারকৃত ২৫৬টি ঐতিহাসিক সামগ্রী রয়েছে।

বাঘা মসজিদ
বাঘা মসজিদ রাজশাহী জেলা সদর হতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। সুলতান নাসিরউদ্দীন নসরাত শাহ ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটি ১৫২৩-১৫২৪ সালে (৯৩০ হিজরি) হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নসরাত শাহ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই মসজিদের সংস্কার করা হয় এবং মসজিদের গম্বুজগুলো ভেঙ্গে গেলে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদে নতুন করে ছাদ দেয়া হয় ১৮৯৭ সালে। প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন সমৃদ্ধ অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা বাঘা দরগা শরীফ বা বাঘা মসজিদ ।বাঘার এই ব্যিখাত ও বহুল প্রচারিত শাহী মসজিদ এককালে এতদঞ্চলে ইসলাম প্রচারে নিবেদিত এক সাধকের প্রতি বাংলার সুলতানি আমলের অন্যতম সুযোগ্য শাসকের স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধার নিদর্শন।যা বর্তমানে দেশের ৫০ টাকার নোটে ও ১০ টাকার ডাক টিকিটে শোভা পাচ্ছে।

মহাস্থানগড়
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর।এটি সোমপুর এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়।বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি উত্তরে অবস্থিত

খুলনা বিভাগ
মাজার শরীফ
কালীদহ সাগর
শীলাদেবীর ঘাট
জিউৎকুন্ড
পরশুরামের ভিটা
বেহুলার বাসর ঘর গোকুল
গোবিন্দ ভিটা
মহাস্থানগড় জাদুঘর

ঢাকা বিভাগ
লালবাগের কেল্লা
লালবাগের কেল্লা বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। সম্রাট আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে লালবাগ কেল্লা নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রাসাদ দূর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তৎকালীন লালবাগ কেল্লার নামকরণ করা হয় আওরঙ্গবাদ কেল্লা বা আওরঙ্গবাদ দূর্গ। পরবর্তীতে সুবাদার শায়েস্তা খাঁনের শাসনামলে ১৬৮৪ খিষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে দূর্গটি পরিত্যাক্ত হয়। সে সময়ে নতুন ভাবে আওরঙ্গবাদ কেল্লা বাদ দিয়ে লালবাগ কেল্লা নামকরণ করা হয়। যা বর্তমানে প্রচলিত। বর্তমানে ( প্রেক্ষিত ২০১২ ) বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগ এই কেল্লা এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। প্রশস্ত এলাকা নিযে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে- কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা , পরীবিবির সমাধি, উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ ।

আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যাবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামানুসারে এর নামকরণ করেন। এর নির্মাণকাল ১৮৫৯-১৮৭২ সাল। ১৯০৬ সালে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিষ্ঠাতাকাল ১৮৭২। আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে অতি সম্প্রতি। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে তখনকার জামালপুর পরগনার (বর্তমান ফরিদপুর-বরিশাল) জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ রংমহল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর জমিদারের ছেলে শেখ মতিউল্লাহ এটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করেন। ১৮৩৫ সালের দিকে বেগমবাজারে বসবাসকারী নবাব আবদুল গনির বাবা খাজা আলীমুল্লাহ এটা কিনে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৮৭২ সালে নবাব আবদুল গনি নতুন করে নির্মাণ করে তার ছেলে খাজা আহসানউল্লাহর নামে ভবনের নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল। এই ভবনটি ১৮৮৮ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ও ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহসান মঞ্জিলই ঢাকার প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য। যেখানে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা হয় নবাবদের হাতে। মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদের সবসময়ই আকৃষ্ট করত। লর্ড কার্জন ঢাকায় এলে এখানেই থাকতেন। বাংলাদেশ সরকার আহসান মনঞ্জিলকে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করে। ১৯৯২ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে এখন পর্যন্ত সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা ৪ হাজার ৭৭। এই রংমহলের ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টিতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ১৯০৪ সালের আলোকচিত্রশিল্পী ফ্রিৎজকাপের তোলা ছবি অনুযায়ী ৯টি কক্ষ সাজানো হয়েছে।
শহীদ মিনার
শহীদ মিনার ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থিত। প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছিল অতিদ্রুত এবং নিতান্ত অপরিকল্পিতভাবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাত্রির মধ্যে তা সম্পন্ন করে। শহীদ মিনারের খবর কাগজে পাঠানো হয় ঐ দিনই। শহীদ বীরের স্মৃতিতে - এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর। মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কোণাকুণিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেঁষে। উদ্দেশ্য বাইরের রাস্তা থেকে যেন সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোনো শেড থেক বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম। সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি। অবশেষে, বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ সালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে। শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন রকম কর্মকান্ড পরিচালিত হলেও এটি এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত শহীদ মিনার অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে।

জাতীয় সংসদ
জাতীয় সংসদ ভবন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রধান ভবন। এটি ঢাকার শেরে-বাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত। প্রখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুই কান এটির মূল স্থপতি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আটটি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনের পর গঠিত সংসদের অধিবেশনগুলি অনুষ্ঠিত হয় পুরনো সংসদ ভবনে, যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমান পাকিস্তান) জন্য আইনসভার জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬১ সালে। ১৯৮২ সালের ২৮শে জানুয়ারি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর একই বছরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদের অষ্টম (এবং শেষ) অধিবেশনে প্রথম সংসদ ভবন ব্যবহৃত হয়। তখন থেকেই আইন প্রণয়ন এবং সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার মূল কেন্দ্র হিসাবে এই ভবন ব্যবহার হয়ে আসছে। লুই কান কমপ্লেক্সের অবশিষ্ট অংশের ডিজাইন করেন। জাতীয় সংসদ ভবন জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের একটি অংশ। কমপ্লেক্সের মধ্যে আরো আছে সুদৃশ্য বাগান, কৃত্রিম হ্রদ এবং সংসদ সদস্যদের আবাসস্থল।

চট্টগ্রাম বিভাগ
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল,শামুক-ঝিনুক, সামুদ্রিক শৈবাল, গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, সামুদ্রিক মাছ, উভচর প্রাণী ও পাখি দেখা যায়। দ্বীপটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন তিনটি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড (টেকনাফ) হতে আসা যাওয়া করে। এছাড়া টেকনাফ থেকে স্পীডবোটও চলাচল করে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে। একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা
চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলার অন্তর্গত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। এখানে পর্যটক আকৃষ্ট অনেক কিছু দেখার আছে। বিশেষত কাপ্তাই হ্রদ যা, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত বাঁধের দ্বারা সৃষ্ট। এই হ্রদের স্বচ্ছ ও শান্ত পানিতে নৌকা ভ্রমন অত্যন্ত সুখকর । হ্রদের উপর আছে ঝুলন্ত সেতু। জেলার বরকল উপজেলার শুভলং-এর পাহাড়ি ঝর্ণা ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। ভরা বর্ষামৌসুমে মূল ঝর্ণার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে। এছাড়া, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ এলাকা।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজার। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে আসছে। কক্সবাজার সৈকতে গেলে দেখা যায় অভাবনীয় দৃশ্য। হাজার হাজার নারী-পুরুষ শিশুর অপূর্ব মিলনমেলা। তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মুখরিত সাগর তীর। ভাটার টানে লাল পতাকার সতর্ক সংকেত না মেনে আবেগ আর উচ্ছ্বাসে মেতে সমুদ্রের পানিতে নেমে দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে অনেক পর্যটক।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পানিতে ডুবে প্রাণহানির ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য নেটিং ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেয়া হলেও এ পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। শহরের অভ্যন্তরে ব্যাপকভাবে পাহাড় কাটা, বনাঞ্চল নিধন, সরকারি খাসজমি দখল করে অবৈধ ইমারত গড়ে ওঠার কারণে পর্যটন শহর এখন শ্রীহীন। তবুও কক্সবাজারের টানে পর্যটকরা আসছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, ইনানিতে পাথরের সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ির ঝরনা, ডুলহাজারা সাফারিপার্কসহ কক্সবাজার জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে।

চট্টগ্রাম শহরের ফয়েজ লেক
ফয়েজ লেক মানব সৃষ্ট একটি খাল যা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশে অবস্থিত। এটি শহরের উত্তরাংশের পাহাড়ী ঢালের পানি প্রবাহকে বাধের মাধ্যমে আটকিয়ে খালটি ১৯২৪ সালে নির্মাণ করা হয় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। রেলওয়ে কলোনির আধিবাসিদের পানির সুবিধা প্রদানের উদ্দেশে। পরে এটির নাম রেলওয়ে প্রকৌশলী মি. ফয় এর নামানুসারে ফয়'জ লেক নামে পরিচিতি পায়। পাহারতলী মুলত চট্টগ্রামের একটি রেল এলাকা, যেখানে কারখানা, শেড আছে। এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রেলওয়ে কর্মচারী বাস করে। বর্তমানে এখানে, বগি ওয়ার্কশপ, ডিজেল ওয়ার্কশপ,, লোকো শেড, পরীক্ষাগার, ভাণ্ডার, ইলেকট্রিক ওয়ার্কশপ, একটি স্কুল (স্থাপিত- ১৯২৪) অবস্থিত। এটি রেলওয়ের সম্পত্তি। যাইহোক, বর্তমানে হ্রদটি কনকর্ড গ্রুপের বাবস্থয়াপনায়, চিত্তবিনোদন পার্ক হিসেবে আছে।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
পতেঙ্গা সৈকত বন্দর নগরী চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। পতেঙ্গা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌ একাডেমী এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সন্নিকটে। রাতের বেলা এখানে নিরাপত্তা বেশ ভালো এবং রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো থাকে। স্থানীয় লোকের মতে, এখানে সুস্বাদু ও মুখরোচক খাবার অত্যন্ত সস্তায় পাওয়া যায়। তেমনি একটি জনপ্রিয় খাবার হল,মসলাযুক্ত কাঁকড়া ভাজা, যা সসা ও পিঁয়াজের সালাদ সহকারে পরিবেশন করা হয়। সন্ধাকালে সৈকতে চমৎকার ঠাণ্ডা পরিবেশ বিরাজ করে এবং লকজন এখানকার মৃদু বাতাস উপভোগ করে। পুরা সৈকত জুড়ে সারিবদ্ধ পাম গাছ আছে। অসংখ্য মাছ ধরার নৌকা এখানে নোঙ্গর করা থাকে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য স্পীডবোট পাওয়া যায়। অধিকাংশ পর্যটক পতেঙ্গা সৈকতে আসে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য।

বরিশাল বিভাগ
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা "সাগর কন্যা" হিসেবে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।

অবস্থান
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নে কুয়াকাটা অবস্থিত। ঢাকা থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার, বরিশাল থেকে ১০৮ কিলোমিটার।

জনসংখ্যার উপাত্ত
২০১১ এর আদমশুমারি অনুযায়ী কুয়াকাটার মোট জনসংখ্যা ৯,০৭৭ জন এবং পরিবার সংখ্যা ২,০৬৫ টি।

ইতিহাস
কুয়াকাটা নামের পেছনে রয়েছে আরকানদের এদেশে আগমনের সাথে জড়িত ইতিহাস। 'কুয়া' শব্দটি এসেছে 'কুপ' থেকে। ধারণা করা হয় ১৮ শতকে মুঘল শাসকদের দ্বারা বার্মা থেকে বিতাড়িত হয়ে আরকানরা এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। তখন এখানে সুপেয় জলের অভাব পূরণ করতে তারা প্রচুর কুয়ো বা কুপ খনন করেছিলেনে, সেই থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় কুয়াকাটা!

দর্শনীয় স্থান
এর সন্নিকটবর্তী আরও যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেগুলো হলঃ
ফাতরার বন - সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম দিকের সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বন, যা 'দ্বিতীয় সুন্দরবন' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে;
কুয়াটারা 'কুয়া' - কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কাছে রাখাইন পল্লী কেরানীপাড়ার শুরুতেই একটা বৌদ্ধ মন্দিরের কাছে রয়েছে একটি প্রাচীন কুপ;[২], পৃষ্ঠা. ৩৭৩)
সীমা বৌদ্ধ মন্দির - প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন সীমা বৌদ্ধ মন্দির, যাতে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি;
কেরানিপাড়া - সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী কেরানিপাড়া;
আলীপুর বন্দর - কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় মৎস্য ব্যবসা কেন্দ্র আলীপুর;
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির - কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে রাখাইন আদিবাসীদের আবাস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির, যাতে রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি;
গঙ্গামতির জঙ্গল - কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূব দিকে গঙ্গামতির খালের পাশে গঙ্গামতি বা গজমতির জঙ্গল।

দুর্গাসাগর দীঘি
দুর্গাসাগর হল, বাংলাদেশের দক্ষিনে বরিশাল জেলার অন্তর্গত একটি বৃহৎ দিঘী। বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে স্বরূপকাঠি - বরিশাল সড়কে মাধবপাশায় এর অবস্থান। শুধু জলাভূমির আকার ২৭ একর। পার্শবর্তী পাড় ও জমি সহ মোট আয়তন ৪৫.৪২ একর। ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ন এই বিশাল জলাধারটি খনন করেন। তার স্ত্রী দুর্গামতির নামানুসারে এর নাম করন করা হয় দুর্গাসাগর। ১৯৭৪ সালে তৎকালিন সরকারের উদ্যোগে দিঘীটি পুনরায় সংস্কার করা হয়। বর্তমানে “দুর্গাসাগর দিঘীর উন্নয়ন ও পাখির অভয়ারন্য” নামে একটি প্রকল্পের অধিনে বরিশাল জেলা প্রশাসন দিঘীটির তত্ত্বাবধান করছে। সম্পূর্ণ দিঘীটি উঁচু সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেড়া। এই দুই দিকে প্রবেশের জন্য দুইটি গেট আছে। দিঘীর মাঝখানে জঙ্গলপূর্ণ একটি ছোট দ্বীপ আছে। শীতকালে এখানে অতিথি পাখির সমাগম হয়। চৈত্রমাসের অষ্টমী তিথীতে হিন্দু ধর্মালম্বীরা এখানে পবিত্র স্নানের উদ্দেশ্যে সমবেত হন।
মনপুরা দ্বীপ
মনপুরা দ্বীপ হচ্ছে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকার উত্তরদিকে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত একটি দ্বীপ। এটি ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় কিছুটা অংশ জুড়ে অবস্থিত। সাম্প্রতিককালে এই দ্বীপে জলদস্যুদের দ্বারা আক্রমণ হয়েছে। এই দ্বীপের আয়তন ৩৭৩ বর্গ কিলোমিটার। এই দ্বীপের উপকূলীয় অন্যান্য দ্বীপের মধ্যে ভোলা (যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ) এবং হাতিয়া দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি দ্বীপগুলোই ঘনবসতিপূর্ণ। সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
মনপুরা চলচ্চিত্রে অভিনীত বৈশিষ্ট্যের মতো এখানকার সাংস্কৃতিক জনজীবনে তা বিরাজমান।

ইতিহাস
প্রাকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা হচ্ছে ভোলা দ্বীপ থেকে প্রায় ৮০ কিঃ মিঃ দুরত্বে সাগরের বুকে নয়নাভিরাম আরেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। মনগাজী নামে এখানকার এক লোক একদা বাঘের আক্রমনে নিহত হন। তার নামানুসারে মনপুরা নাম করন করা হয়। বাংলাদেশের বৃহওম দ্বীপ ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা ভূমি রূপালী দ্বীপ মনপুরা। চতুর্দিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজ-শ্যামল ঘেরা মনপুরা। সুবিশাল নদী , চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগানে সমৃদ্ধ।
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার মোহনায় ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। মিয়া জমিরশাহ'র স্মৃতি বিজড়িত মনপুরা দ্বীপ অতি প্রাচীন। একসময় এ দ্বীপে পর্তুগীজদের আস্তানা ছিল। তারই নিদর্শন হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় লম্বা লোমওয়ালা কুকুর।

অবস্থান
বাংলাদেশের বৃহওম দ্বীপ ভোলা জেলার মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। মেঘনার কোল ঘেসে জেগে ওঠা তিন দিকে মেঘনাআর একদিকে বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ সাজে সজ্জিত লীলাভূমি মনপুরা। ভোলা জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিন পুর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষে মেঘনার মোহনায় চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলা। মনপুরা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে মনপুরা ফিশারিজ লিঃ।

চর
ছোট বড় ১০টি চর ও বনবিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি বিশাল মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। শীত মৌসুমে শত শত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। এই চরগুলো হলো-
চরতাজাম্মুল,
চর পাতালিয়া,
চর পিয়াল,
চরনিজাম, চর সামসুউদ্দিন,
লালচর,
ডাল চর,
কলাতলীর চর ইত্যাদি।

সোনাচর বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার দক্ষিণেএকটি ছোট সমুদ্র সৈকত। মোহনা ঘিরে আছে সবুজ বেষ্টনী। জোয়ারের সময় সবুজ বেষ্টনী ৭/৮ ফুট পানির নীচে চলে যায়। দর্শণীয় এ সৈকতে নিরাপদে গোসল করা যায়।
সোনারচর বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় অবস্থিত একটি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য। ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২৬.৪৮ হেক্টর জমি নিয়ে এই বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যটি গঠিত।

সিলেট বিভাগ
জাফলং
জাফলং, বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি এলাকা। জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত ।

বিবরণ
বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তি এলাকায় জাফলং অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত। সিলেট জেলার জাফলং-তামাবিল-লালখান অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ী উত্তলভঙ্গ। এই উত্তলভঙ্গে পাললিক শিলা প্রকটিত হয়ে আছে, তাই ওখানে বেশ কয়েকবার ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশে চার ধরণের কঠিন শিলা পাওয়া যায়, তন্মধ্যে ভোলাগঞ্জ-জাফলং-এ পাওয়া যায় কঠিন শিলার নুড়ি। এছাড়া বর্ষাকালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিলং মালভূমির পাহাড়গুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে ঐসব পাহাড় থেকে ডাওকি নদীর প্রবল স্রোত বয়ে আনে বড় বড় গণ্ডশিলাও (boulder)। একারণে সিলেট এলাকার জাফলং-এর নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায়। আর এই এলাকার মানুষের এক বৃহৎ অংশের জীবিকা গড়ে উঠেছে এই পাথর উত্তোলন ও তা প্রক্রিয়াজাতকরণকে ঘিরে। জাফলং-এ পাথর ছাড়াও পাওয়া গেছে সাদামাটি বা চীনামাটিও, যদিও সেখানে মাটি বা বালি পরিশোধন করার মতো কোনো অবকাঠামো নেই। এই এলাকায় যেমন সাধারণ বাঙালিরা বসবাস করেন, তেমনি বাস করেন উপজাতিরাও। জাফলং-এর বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জী।[৬] আদমশুমারী অনুযায়ী জাফলং-এ ১,৯৫৩ জন খাসিয়া উপজাতি বাস করেন।

ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের মতে বহু হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীনে থাকা এক নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে খাসিয়া-জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটলেও বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা পতিতও পড়েছিল। পরবর্তিতে ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌপথে জাফলং আসতে শুরু করেন, আর পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকলে একসময় গড়ে ওঠে নতুন জনবসতি।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণ কবর,তামাবিল, জাফলং
১৯৭১ থ্রিস্টাব্দের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সিলেটে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল জাফলংয়ের সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকিতে। ১৩ জুলাই ইপিআর ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের একটি সশস্ত্র দল জাফলংয়ে ঢোকে। পিয়াইন নদীর ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে রাজাকার আজিরউদ্দিনের বাড়িতে ছিল একদল পাকিস্তানি সেনা। উভয় পক্ষের মধ্যে দুই দফা যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানী বাহিনীর ৫ সেনা নিহত হলে পাকিস্তানিরা পলিয়ে যায়। একই সময় দুজন মুক্তিযোদ্ধাও আহত হন। এছাড়া জাফলংয়ের পাশে সারি নদীতেও বড় আকারের যুদ্ধ হয়। আর এভাবেই শত্রুমুক্ত হয়ে স্বাধীনতা পায় জাফলং। আর আজ জাফলং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানের রূপ পরিগ্রহ করেছে। তামাবিল স্থল বন্দরের শুল্ক অফিসের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণ কবর।

ঝরণা, জাফলং
জাফলং-এর বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়ালে ভারত সীমান্ত-অভ্যন্তরে থাকা উঁচু উঁচু পাহাড়শ্রেণী দেখা যায়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরণা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও আকর্ষণ করে অনেককে।[৯] এছাড়া সর্পিলাকারে বয়ে চলা ডাওকি নদীও টানে পর্যটকদের। মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের ফলে ভারত সীমান্তে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর স্রোত বেড়ে গেলে নদী ফিরে পায় তার প্রাণ, আর হয়ে ওঠে আরো মনোরম। ডাওকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলং-এর অন্যতম আকর্ষণ।[২] পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে জাফলং-এ আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলাকে ঘিরে উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। বর্ষাকাল আর শীতকালে জাফলং-এর আলাদা আলাদা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। বর্ষাকালে বৃষ্টিস্নাত গাছগাছালি আর খরস্রোতা নদী হয় দেখার মতো। তাছাড়া পাহাড়ের মাথায় মেঘের দৃশ্যও যথেষ্ট মনোরম।

জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য
জাফলং অঞ্চলের উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে খাটো জাতের মধ্যে পাম গাছ (Licuala species) দেখা যায়। জাফলং-এ নারিকেল আর সুপারির গাছকে কেন্দ্র করে বাস করে প্রচুর বাদুড়। এছাড়া জাফলং বাজার কিংবা জাফলং জমিদার বাড়িতে আবাস করেছে বাদুড়। যদিও খাদ্যসংকট, আর মানুষের উৎপাতে, কিংবা অবাধ বৃক্ষনিধনে অনেক বাদুড় জাফলং ছেড়ে চলে যাচ্ছে জৈয়ন্তিয়া আর গোয়াইনঘাটের বেঁচে থাকা বনাঞ্চলে, কিংবা প্রতিবেশী দেশ ভারতে।

পবিবেশ বিপর্যয়
জাফলং-এর পাথর শিল্প একদিকে যেমন ঐ এলাকাকে সকল অঞ্চলের কাছে পরিচিত করেছে, তেমনি এই পাথর শিল্পের যথেচ্ছ বিস্তারে এলাকার বাতাস হয়ে পড়েছে কলুষিত। যন্ত্রের সহায়তায় উন্মুক্ত উপায়ে পাথর ভাঙার কারণে ভাঙা পাথরের গুঁড়া আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে আর সাধারণ্যের শ্বাস-প্রশ্বাসকে ব্যাহত করছে। এছাড়া সরকারি বিধিনিষেদের তোয়াক্কা না করে নদী থেকে যথেচ্ছ পাথর উত্তোলন নদীর জীববৈচিত্র্য আর উদ্ভিদবৈচিত্র্যকে করে তুলেছে হুমকির সম্মুখিন। এছাড়া অনুমোদনহীনভাবে ৩০-৩৫ ফুট গর্ত করে পাথর উত্তোলন নদী এবং নদী অববাহিকার ভূমিকে করছে হুমকির সম্মুখিন। এলাকার প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে বিপুল পরিমাণ গাছ কেটে ফেলার কারণে প্রায়ই সেখানে নানা রোগব্যাধির প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাথর আর বালুতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় পিয়াইন নদীর নাব্যতা কমে গেছে। ফলে হঠাৎই উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় নিকটবর্তি অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা; যেমন: ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ডাউকি সীমান্তে এরকমই উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে বিডিআর ক্যাম্পসহ বেশ কিছু এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে তারিখেও অনুরূপ ঢলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় চা-বাগানসহ বস্তি। এছাড়া নিষিদ্ধ "বোমা মেশিন" (স্থানীয় নাম) দিয়ে নদী থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে স্থানীয় পিয়াইন নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিপুল সম্পদের অপচয়ও পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম একটি উদাহরণ (প্রেক্ষিত জুলাই ২০১২)।

যাতায়াত ব্যবস্থা
১৯৮০'র দশকে সিলেটের সাথে জাফলং-এর ৫৫ কিলোমিটার সড়ক তৈরি হওয়ার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য সকল অঞ্চল থেকে এই এলাকার সাথে সড়ক-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সড়কপথে সিলেট সদর থেকে এই স্থানের দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার। জাফলং জিরো পয়েন্টে রয়েছে তামাবিল স্থল বন্দর, এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতের সাথে পণ্য আমদানি রপ্তানী করা হয়। বিশেষ করে ভারত থেকে কয়লা আমদানি করা হয়।


তামাবিল
তামাবিল বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। এখান থেকে ভারতের পাহাড়, ঝর্ণা ছাড়াও অনেক দর্শনীয় স্থান অবলোকন করা যায়।

অবস্থান
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরে তামাবিল অবস্থিত।

দর্শনীয় স্থান
তামাবিল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখান থেকে সরাসরি ভারতের পাহাড়, পর্বত, ঝর্ণা, জলপ্রপাত দেখা যায়। সীমান্তের ওপারে অনেক গুলো জলপ্রপাত রয়েছে এই জলপ্রপাত গুলো বিকাল বেলা ও গোধূলির সময় দেখতে চমৎকার লাগে। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় জমায় তামাবিল সীমান্তে।

বিছানাকান্দি
বিছানাকান্দি বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত রুস্তমপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানকার নদী দেখতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ভূপ্রকৃতি
বিছানাকান্দি পর্যটন এলাকাটি মূলত একটি পাথর কোয়েরি যেখানে নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয়। এই জায়গায় খাসিয়া পর্বতের বিভিন্ন স্তর এসে একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে। খাসিয়া পর্বত থেকে নেমে আসা একটি ঝরনা এখানে একটি হ্রদের সৃষ্টি করেছে যা পিয়াইন নদীর সাথে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। এখানকার শিলা-পাথর গুলো একদম প্রাকৃতিক এবং এগুলো পাহাড়ি ঢলের সাথে পানির মাধ্যমে নেমে আসে।

শাহ পরাণের মাজার
শাহ পরাণের মাজার সিলেট শহরের একটি পুণ্য তীর্থ বা আধ্যাতিক স্থাপনা। যা হচ্ছে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ জালালের অন্যতম সঙ্গী অনুসারী শাহ পরাণের সমাধি। এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহ থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দুরত্বে শাহ পরাণের মাজার অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহর মতো এ মাজারেও প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঐতিহাসিক মুমিনুল হক সহ অনেকেই লিখেছেন; সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরাণের দ্বারা মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে।

মাজার পরিক্রমা সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিমনগর এলাকায় টিলার উপর একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের নিচে রয়েছে শাহ পরাণের কবর। মাজার টিলায় উঠা নামার জন্য উক্ত মাজার প্রাঙ্গনে উত্তর ও দক্ষিণ হয়ে সিঁড়ি আছে। যা প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু দেখায়। এই সিঁড়িটি মোগল আমলে নির্মিত বলে লোক মুখে শোনা যায়। মাজারের পশ্চিম দিকে মোগল বাদশাদের স্থাপত্বকীর্তিতে নির্মিত তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদে প্রায় ৫ শত মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। মাজার টিলা থেকে প্রায় ১৫/২০ ফুট দহ্মিণ পশ্চিমে মহিলা পর্যটকদের জন্য এক ছালা বিশিষ্ট দালান ঘর রয়েছে। উক্ত দালানের অল্প পরিসর দহ্মিণ পুর্বে আরেকটি ঘর দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘরখানা মুলত বিদেশাগত পর্যটকদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার হয়। এই ঘরের পাশেই একটি পুকুর রয়েছে, যা অজু গোসলের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সংক্ষিত পরিচিতি শাহ পরাণের পুর্ব পুরুষগণ মুলত বোখারীর শহরের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর উধ্বতন ৪র্থ পুরুষ শাহ জামাল উদ্দীন, বোখারী হতে ধর্ম প্রচারে জন্য প্রথমে সমরকন্দ ও পরে তুর্কিস্থানে এসে বসবাস করেন। বংশ সূত্রে শাহ পরাণের পিতা মোহাম্মদও একজন খ্যাতনামা ধার্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মাতা শাহ জালালে আত্মিয় সম্পর্কে বোন ছিলেন। সে হিসেবে তিনি (শাহ পরাণ) হচ্ছেন শাহ জালালের ভাগ্নে। শাহ পরাণের বয়স যখন ১১ বত্সর তখন তিনি তাঁর পিতাকে হারান। পরবর্তিকালে তাঁর আত্মীয় প্রখ্যাত দরবেশ সৈয়দ আহমদ কবিরের কাছে তিনি ধর্ম শিক্ষায় দীক্ষিত হন। সেখান থেকে তিনি আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভে নেশাপুরের বিখ্যাত দরবেশ পাগলা আমীনের স্মরণাপন্ন হয়ে আধ্যাত্মিক শিক্ষায় দীক্ষিত হন। শাহ জালাল যখন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রার উদ্যোগ নেন। এ সময় তিনি (শাহ পরাণ) খবর পেয়ে মামার সহচার্য লাভের আশায় হিন্দু স্থানে এসে মামার সঙ্গী হন। সিলেট বিজয়ের পর শাহ জালালের আদেশে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শাহ পরাণ সিলেটের নবীগঞ্জ, হবীগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচার করেন। পরবর্তিকালে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ হলে শাহ জালালের নির্দেশে তিনি (শাহ পরাণ) সিলেট শহর হতে ছয় মাইল দুরবর্তি দহ্মিণকাছ পরগণাস্থিত খাদেম নগর এলাকায় এসে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বসতি স্থাপন করেন এবং এখানেই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করে বর্তমান মাজার টিলায় চির নিদ্রায় শায়িত হন।

অলৌকিক ঘটনা শাহ জালাল সিলেট আগমন কালে দিল্লী থেকে আসার সময় নিজামুদ্দীন আউলিয়া প্রদত্ত এক জোড়া কবুতর (সিলেটি উচ্চারণ - কৈতর) সঙ্গে আনেন। কবুতর জোড়া সিলেট নিয়ে আসার পর বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শাহ জালালের কবুতর বলে জালালী কৈতর নামে খ্যাত হয়। ধর্মীয় অনূভূতির কারণে এ কবুতর কেহ শিকার করতো না। শাহ পরাণ এ বিষয়টি আমলে না নিয়ে, প্রতি দিন একটি করে কবুতর খেতেন। কবুতরের সংখ্যা কম দেখে শাহ জালাল অনুসন্ধানে মুল ঘটনা জেনে রুষ্ট হন। একথা শাহ পরাণ জানতে পেরে গোপন করে রাখা মৃত কবুতরের পাক হাতে উঠিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন; আল্লাহর হুকুমে কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে যাও। সাথে সাথে পাক গুলো এক ঝাক কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে গেল। শাহ জালাল ভাগিনেকে ডেকে বললেন; তোমার অলৌকিক শক্তি দেখে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি । কিন্তু এ ভাবে প্রকাশ্যে কেরামত প্রকাশ করা সঠিক নয়। সব মানুষের বুঝ শক্তি এক রকম হয় না। এ ভাবে কেরামত প্রকাশের কারণে মানুষ ভুল ব্যাখ্যায় পতিত হতে পারে। এরপর শাহ পরাণকে খাদিম নগর এলাকায় ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দেন। শাহ পরাণ খাদিম নগরে ইসলাম প্রচারে তাঁর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রাখেন এবং এখানেই তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হন।

মালনীছড়া চা বাগান

মালনীছড়া চা বাগান বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় অবস্থিত।

ইতিহাস

সিলেট সদর উপজেলায় রয়েছে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান। যার নাম ‘মালনীছড়া চা বাগান।’ ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৪৯ সালে ১৫০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া। বাগানটি বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি তত্ত্বাবধানে। ভ্রমনবিলাসী মানুষের কাছে আনন্দ ভ্রমণ কিংবা উচ্ছল সময় কাটানোর প্রথম পছন্দের স্থান হলো মালনীছড়া চা বাগান। সিলেট শহরের একেবারেই অদূরে হওয়ায় চা বাগান দেখতে পর্যটকরা প্রথমেই ছুটে যান মালনীছড়ায়। মালনীছড়া চা বাগানের প্রবেশদ্বার বেশ কয়েকটি। আপনি চাইলে যে কোন একটি পথ দিয়েই চা বাগান দর্শনের কাজ শুরু করতে পারেন। তবে ঝামেলা এড়াতে বাগানে প্রবেশের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়াই বাঞ্চনীয়। তারপর ঘুরে দেখেন বাগানের এপাশ থেকে ওপাশ। দেখে আসতে পারেন বাগানের বাংলো। মালনীছড়ার পাশেই রয়েছে আলী বাহার চা বাগান। সিলেটের চায়ের রঙ, স্বাদ এবং সুবাস অতুলনীয়। উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান সিলেট শহরে অবস্থিত। নাম মালনীছড়া। ১৮৪৯ সালে এই চা বাগান প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে বেসরকারী তত্ত্ত্বাবধানে চা বাগান পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৫০০ একর জায়গার উপর এই চা বাগান অবস্থিত। চা বাগানের পাশাপাশি বর্তমানে এখানে কমলা ও রাবারের চাষ করা হয়। মালনীছড়া চা বাগান ছাড়াও সিলেটে লাক্কাতুড়া চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, খাদিম, আহমদ টি স্টেট, লালাখাল টি স্টেট উল্লেখযোগ্য।

অবস্থান

মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়ীতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

পাহাড়ের গায়ে চা বাগানের দৃশ্য, ছায়া বৃক্ষ, চা শ্রমিকদের আবাসস্থল, কমলার বাগান, রাবার বাগান, চা তৈরীর প্রক্রিয়া। বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ হলেও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অন্য এক ভালোলাগার ধারক হয়ে আছে সিলেটের চা বাগান। তাই ছুটির অবসরে কিংবা বৈকালিক বিনোদনের তৃষ্ণা মেটাতে তারা ছুটে যান চা বাগানের সবুজ অরণ্যে। সারাটা বিকাল চলে সবুজের ভেতর লুকোচুরি, হৈ হুল্লোড় আর আনন্দে অবগাহন। বাংলাদেশের মোট ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে ১৩৫টি রয়েছে বৃহত্তর সিলেটে। আর বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি চা বাগান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চা বাগান হলো- মালনীছড়া চা বাগান, লাক্কাতুরা চা বাগান, তারাপুর চা বাগান, দলদলি চা বাগান, খাদিম চা বাগান, বড়জান চা বাগান, গুল্নি চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, হাবিব নগর চা বাগান, আহমদ টি এস্টেট, খান চা বাগান, লালাখাল টি এস্টেট, শ্রীপুর চা বাগান, মুলাগুল চা বাগান ইত্যাদি।

নগরীর অন্যান্য চা বাগান
লাক্কাতুরা চা বাগান

মালনীছড়া আর লাক্কাতুরা চা বাগান পাওয়া যাবে একই যাত্রা পথে। ব্যবধান শুধু রাস্তার এপাশ ওপাশ। শ্রেষ্টত্বের দিক থেকে লাক্কাতুরা চা বাগানটি কখনো কখনো মালনীছড়া চা বাগানকে ছাড়িয়ে গেছে। নগরীর চৌকিদেখি আবাসিক এলাকা পেরুনোর পর গলফ ক্লাবের রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই একবারেই চলে যাবেন বাগানের মধ্যিখানে। বাগানের এপাশ ওপাশ ঘুরে গল্ফ ক্লাবের সুন্দরম টিলার উপরও হতে পারে আপনার আনন্দ আয়োজন। গল্ফ ক্লাব মাঠ পেরিয়ে আরো একটু সামনে এগুলেই পেয়ে যাবেন সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম। চারপাশে চা বাগান আর মাঝখানে স্টেডিয়াম, সত্যিই অসাধারণ! এমন সবুজ প্রকৃতির ভেতর স্টেডিয়াম পৃথিবীতে সম্ভবত একটাই। যেখানেই ২০১৪ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের জমকালো আসর বসেছিল ।

তারাপুর চা বাগান

তারাপুর চা বাগানও সিলেট শহরের একেবারেই অদূরে। নগরীর আম্বরখানা থেকে মদিনা মার্কেট যাওয়ার পথে পাঠানটুলা এলাকায় প্রকৃতির ছায়াঘেরা পরিবেশে তারাপুর চা বাগান। একবারেই লাগোয়াভাবে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় মদন মোহন কলেজের ব্যবসায় শাখার ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারাপুর চা বাগান পর্যটকদের মাঝে আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় সবসময়ই পর্যটকদের পদচারনায় মূখর থাকে এ বাগানটি।

দলদলি চা বাগান

নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকা থেকে এমসি কলেজের দিকে একটু অগ্রসর হলেই হাতের বাম পাশে উপজেলা খেলার মাঠ। এর পাশ দিয়েই ভেতরে যাওয়া রাস্তায় সামান্য গেলেই পেয়ে যাচ্ছেন দলদলি চা বাগান। মূল বাগানে যেতে হলে পার হতে হবে বেশ কিছু লোকালয়। লোকালয় থেকে ভেতরে যেতে হয় বিশাল বিশাল টিলা বেষ্টিত মেঠো পথ ধরে। তারপর মূল চা বাগান। ভেতরে যাওয়ার রাস্তাটি গাড়ীর জন্য বেশ সুবিধাজনক নয়, সে জন্য মোটর বাইক কিংবা নিজে পা হতে পারে আপনার সুবিধাজনক বাহন।

একের ভেতর তিন

শহরতলীর শাহপরাণ মাজার গেট থেকে তামাবিল রোডে সামান্য গেলেই হাতের বাম পাশ দিয়ে ভেতরে গেছে খাদিম জাতীয় উদ্যানের রাস্তা। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ভেতরে উদ্যান (খাদিম রেইন ফরেস্ট)। কিন্তু চা বাগানের জন্য এতোদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তামাবিল রোড থেকে একটু ভেতরে গেলেই একে একে পাওয়া যাবে বড়জান চা বাগান, গুলনি চা বাগান এবং খাদিম চা বাগান। বাগানের লাগোয়া পথে যেতে যেতে দেখা সবুজ দৃশ্যপট, শিল্পিত লোকালয় পর্যটকদের নজর কাড়ে সহজেই। রাস্তার পাশেই চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরি হওয়ায় নাকে লাগে সতেজ চায়ের মধুমাখা ঘ্রাণ। এছাড়া হাবিব নগর চা বাগান, আহমদ টি এস্টেট এবং খান চা বাগানের অবস্থান সিলেট-তামাবিল সড়কের হরিপুর এলাকায়।

লালাখাল টি এস্টেট

সিলেট-তামাবিল সড়কের সারিঘাট এলাকায় গিয়ে নৌকা করে যেতে হয় লালাখাল টি স্টেট। ঘন্টা খানেকের পথ। চা বাগানের সকল সৌন্দর্য ছাড়িয়ে গেছে সবুজ জলের আস্তরনে ছেয়ে যাওয়া নদীপথ। আসলেই অসাধারণ...! দু’পাশের সবুজ প্রকৃতির ছায়া যেন আছড়ে পড়েছে স্রোতস্বীনির বুকে।

শ্রীপুর চা বাগান

জাফলং...! সবুজের সাথে সবুজের কি অপরূপ মেলবন্ধন! পর্যটন স্পট জাফলংয়ের কথা কে না জানে? প্রকৃতিপ্রেমীদের পদচারনায় প্রতিনিয়ত মূখর থাকে পর্যটন স্পট জাফলং। জাফলংয়ের সৌন্দর্যের মাঝে অন্য এক ভালোলাগার আবেশ সৃষ্টি করেছে শ্রীপুর চা বাগান। আপনার আগামীর জন্য এখানেও ফ্রেমবন্দি করে রাখতে পারেন কিছুটা সময়। সিলেট, যেন সবুজ প্রকৃতির অভয়াশ্রম! আর সবসময় প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানুষের জন্য সেরা সময় এখনই। যখন প্রকৃতির সব বিচিত্র সৌন্দর্য মিশে আছে চা গাছের সবুজ পাতায়। তো এই অপরূপ চায়ের দেশে আপনাকে স্বাগতম...।

শাহ জালালের দরগাহ
শাহ জালালের দরগাহ, সিলেট শহরের একটি আধ্যাত্মিক স্থাপনা, যা মূলত ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে আগত পাশ্চাত্যের ইসলাম ধর্মপ্রচারক শাহ জালালের বাসস্থান ও শেষ সমাধি। এই দরগাহ সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তে একটি টিলার উপর অবস্থিত। কারো কারো মতে সিলেট ভূমির মুসলিম সভ্যতা ও ধর্মমত এই দরগাহকে কেন্দ্র করে প্রসার লাভ করেছে। শাহ জালালের লৌকিক ও অলৌকিক স্মৃতি বিজড়িত এই স্থান সিলেটের অন্যতম পূণ্য তীর্থ হিসেবে পরিচিত। ঐতিহাসিক অচ্যুৎচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধির মতে এই দরগাহ থেকে প্রেরিত শাহ জালালের সঙ্গী অনুসারীদের দ্বারা ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা, কুমিল্লা ও আসাম প্রভৃতি স্থানে মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার হয়েছে।[৩] বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাৎসরিক উরস (স্থানীয় উচ্চারণ: উরুস) উপলক্ষে প্রতিবছর হাজার হাজার লোক এখানে এসে শাহ জালালের উপলক্ষ ধরে (অসিলা) স্রষ্টার কাছে ভক্তি নিবেদন ও কৃতজ্ঞতা জানান।

দরগাহ প্রধান ফটক

সিলেট বিজয়ের পর দিল্লীর সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ, শাহ জালালকে সিলেটের শাসনভার গ্রহণের প্রস্তাব করেন। কিন্তু শাহ জালাল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তিতে সুলতান বিশেষ ঘোষণা জারি করে সিলেট শহরের (কসবে সিলেট) খাজানা মুক্ত করে দরবেশকে সম্মানীত করেন যা এখনো (দরগাহর সংশ্লিষ্ট এলাকা) বলবত আছে। সুলতানি আমল হতে প্রথা অনুযায়ী নবাব, বাদশা বা রাজকর্মচারীদের মধ্যে যারা সিলেট আসতেন, নানা প্রকার দালান ইত্যাদি নির্মাণ করে সম্মানের সাথে দরগাহের সংস্কার ও প্রসার সাধন করতেন। দরগাহ চত্বরে অবস্থিত স্থাপনা গুলো সুলতান ও মোগলদের আমলের নির্মিত বলে তাম্রফলক ও প্রস্তরফলকে লিখিত বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। যেমন; সিলেট শহরের সর্ব বৃহৎ দরগাহ মসজিদের ফলকে লিখিত তথ্যে আছে, 'বাংলার সুলতানদের কর্তৃক ১৪০০ সালে ইহা নির্মিত। শাহ জালালের সমাধি ঘিরে যে দেওয়াল রয়েছে তা লুত্ফুল্লাহ আমীন বকশী কর্তৃক নির্মিত বলে একটি ফলক সূত্রে উল্লেখ পাওয়া যায় । এভাবে বিভিন্ন দালান, মসজিদ ও পুকুর ঘাট ইত্যাদি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসনকর্তা সহ বাদশা ও সুলতানদের দ্বারা শাহ জালালের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে তৈরি বলে উল্লেখ আছে। এছাড়া দরগাহের লঙ্গখানায় অর্থ সাহায্য, খাদেমগনের জন্য জায়গির ব্যবস্থা, দরগাহের আলোক সজ্জা ইত্যাদি অনুদান সুলতানগণ ও মোগল বাদশাহদের দরবেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিভিন্ন বিবরণীতে পাওয়া যায়। যখনই দিল্লীর রাজপুরুষগণ সিলেটের শাসনকর্তা নিযুক্ত হতেন, প্রথা অনুযায়ী; শাসন ভার গ্রহনের পূর্বে দরগাহে এসে জিয়ারত সম্পন্য করে দরগাহের স্থলাভিষিক্ত খাদেমগণ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েই কার্যভার গ্রহণ করতেন এবং এ প্রথা ব্রিটিশ রাজত্বের প্রারম্ভ কাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। দরগাহের পুরানো রেকড পত্র অনুসন্ধানে পরিলক্ষিত হয়, দিল্লীর রাজপুরুষগণ রাজকীয় আড়ম্বরে দরগায় এসে পৌছলে পরে, খানকার শেখ রাজপুরুষদের মাথায় পাগড়ি বেঁধে অনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রতি শাহ জালালের মনোনয়ন জ্ঞাপন না করা পর্যন্ত জনসাধারণ তাদেরকে শাসনকর্তা হিসেবে গ্রহন করতেন না।

দরগাহর পরিক্রমা
দরগাহ মিনারের মাথায় অবস্থিত আলোকোজ্জ্বল আল্লাহু শব্দ

শাহ জালালের সমাধিকে দরগাহ টিলা বলে অভিহিত করা হয়। টিলার উত্তর প্রান্তে প্রাচীর বেষ্টিত স্থানে শাহ জালালের সমাধি অবস্থিত। চার কোণে চারটি উঁচু স্থম্ভ দ্বারা তা নির্মিত। দরবেশের সমাধির পশ্চিম প্রান্তে প্রাচীর সীমা ঘেঁষে একটি ছোট মসজিদ রয়েছে। যা সিলেটের তদানীন্তন মাজিষ্ট্রেট ও কালেক্টর উইলস দ্বারা পুনঃনির্মিত হয়[২]। দরবেশের সমাধির পুর্ব পশ্চিমে যথাক্রমে ইয়ামনের যুবরাজ শেখ আলী ও ভারতের গৌড় রাজ্যের উজির মকবুল খানের কবর রয়েছে। শাহ জালালের দরগাহর দক্ষিণ দিকে প্রবেশ পথে বাহির হতে পাশে ছিল্লাখানা ও দরবেশের সহাধ্যায়ী হাজী ইউসুফ, হাজী খলিল ও হাজী দরিয়া নামক এই তিন জন অলির সমাধি বিদ্যমান। তাঁদের পাশে দরগাহের ভূতপূর্ব মোতওয়াল্লী আবু তুরাবের কবর। এখান থেকে পশ্চিমের প্রবেশ পথে বাহির হতে আরেকটি বেষ্টনীর পাশে দরগাহের আরো দুই জন মোতওয়াল্লী আবু নাসির ও আবু নসর পাশাপাশি অন্তিম শয্যায় শায়িত আছেন। ইহার দক্ষিণে একটি উচুঁ স্থানে গম্বুজ বিশিষ্ট ঘড়ি ঘর নামে এক দালান দেখতে পাওয়া যায়। এই ঘড়ি ঘরের পূর্ব দিকে প্রকাণ্ড গম্বুজ ওয়ালা বৃহৎ অট্টালিকা। যা এই অঞ্চলে সুদৃঢ় অট্টালিকা বলে খ্যাত । এটি সাধারণত গম্বুজ বলে অভিহিত। এই গম্বুজটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে তার বিশ্বস্ত কর্মী ফরহাদ খান দ্বারা নির্মিত। গম্বুজের দক্ষিণে দরগাহ মসজিদ নামে খ্যাত মুসলমানদের একটি বৃহৎ উপসানাগার রয়েছে। বাংলার সুলতান আবু মুজাফফর ইউসুফ শাহের সময় কালে ( ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ) মন্ত্রী মজলিশে আতার কর্তৃক দরগাহ চত্বরে নির্মিত হয়ে ছিল। পরবর্তিতে বাহারাম খান ফৌজদারের সময়ে (১৭৪৪ খ্রিঃ) পূর্ণনির্মিত হয়। সিলেট শহরের মুসলমানদের উপাসনাগার হিসেবে এই মসজিদই সর্ব বৃহৎ । উক্ত মসজিদের সম্মুখে উত্তর দক্ষিণ হয়ে লম্বালম্বি প্রকাণ্ড প্রাঙ্গন রয়েছে। টিলার উপর পাথরের গাঁথুনী দিয়ে অতি সুদৃঢ়ভাবে প্রাঙ্গনটি প্রস্তত করা হয়েছে। টিলা হতে নীচে অবতরণের জন্য উক্ত প্রাঙ্গনের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সিঁড়ি আছে। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসলে দরগাহ টিলা ঘেঁষে একচালা একটি ঘর পাওয়া যায়। এই ঘর মহিলা দর্শনার্থীদের উপাসনার জন্য নির্মিত। ইহার উত্তরে মুসল্লীদের অজুর জন্য (নতুন ভাবে প্রস্তত) টাব সিস্টেমে পানির ব্যবস্থা রয়েছে। এখান থেকে অল্প পরিসর উত্তরে একটি বড় পুকুরে গজার জাতীয় মাছ সাঁতার কেটে বেড়ায় এবং খাবার দেখিয়ে ডাক দিলে কুলে এসে ভীড় জমায়। দরগাহ পুকুরের গজার মাছ সম্পর্কে প্রচলিত লোককাহিনী অনুসারে, শাহ জালাল এগুলোকে পুষেছিলেন। যে কারনে জিয়ারতকারী সহ সিলেটের আধিবাসীরা আজও প্রথাগতভাবে গজার মাছের প্রতি স্নেহ দেখিয়ে আসছেন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে অজ্ঞাত লোকেরা বিষ প্রয়োগে পুকুরের প্রায় ৭শ’রও বেশি গজার মাছ হত্যা করে। ফলে পুকুরটি গজার মাছ শুন্য হয়ে পড়ে। পরে হযরত শাহ জালালের এর অপর সফরসঙ্গী মৌলভীবাজারের শাহ মোস্তফার মাজারের পুকুর থেকে ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে ২৪ টি গজার মাছ এনে পুকুরে ছাড়া হয়। বর্তমানে পুকুরের গজার মাছের সংখ্যা কয়েক শতকে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায় । দরগাহ পুকুরের ঠিক উত্তর পাশে ও দরগাহ টিলার পূর্বে একটি বড় আঙ্গিনা রয়েছে। উক্ত আঙ্গিনার উত্তর-পূর্বে একটি বৃহৎ লঙ্গরখানা ছিল। অনেক কাল পূর্বে ইহা পর্য্যটক, বিদেশাগত দর্শক ও গবির দুঃখিদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হতো। যা বর্তমানে পরিবেশজনিত কারণে বন্ধ আছে। লঙ্গরখানার পূর্বদিকে অন্য একটি ঘরে তামার নির্মিত দুটি বড় বড় ডেগচী রয়েছে। যার একেকটিতে সাতটি গরু ও সাত মন চাউল এক সাথে পাক করা যায়। উক্ত ডেগচীর কিনারায় ফার্সী ভাষা লিখিত, জাহাঙ্গীর নগর (ঢাকা পুরানো নাম) নিবাসী ইয়ার মোহাম্মদের পুত্র শায়খ আবু সাঈদ ইহা (ডেগচী) তৈরি করিয়ে মুরাদ বখস কর্তৃক দরগাহে পাঠানো হলো। সন তারিখঃ- রমজান ১১০৬ হিঃ (১৬৯৫ খ্রিঃ)। দরগাহের আঙ্গিনার পূর্ব সীমায় ও ডেগচী ঘরের অল্প পরিসর দহ্মিণে উত্তর দক্ষিণে লম্বালম্বি একটি প্রশস্থ দেওয়াল ইহার মধ্যস্থলে দরগাহের প্রধান প্রবেশ পথ। যা দরগাহ গেইট হিসেবে খ্যাত। দরগাহ গেইটের দক্ষিণ দিকে ছাত্রাবাস সহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে।

অলৌকিক ঝরণা

দরগাহ টিলার পশ্চিমে অল্প দুরে হযরত শাহ জালালের অলৌকিক উত্স বা ঝরণা অবস্তিত। ঝরণাকে কেন্দ্র করে দরবেশের নানা অলৌকিক কীর্তি কিংবদন্তী রুপে এখনও প্রচলিত আছে। সিলেটের লোক বিশ্বাস মতে, ঝরণায় প্রবাহিত পানি জমজমের পানির সদৃশ, রোগীরা এই পানি পান করে আরোগ্য লাভ করে। অনেক কাল পূর্বে দরগাহ টিলায় শাহ জালাল এর বাসস্থান ও উপাসনা গৃহের উত্তর পূর্ব দিকে একটি পুকুর ছিল। সিলেটের সর্বসাধারণ হিন্দু ও মুসলিম সকলেই ইহার জল ব্যবহার করত। শাহ জালাল অজু গোসল সম্পর্কিত পানি ব্যবহারে পবিত্রতা বিষয়ে চিন্তিত হয়ে দরগাহ টিলার পশ্চিমে একটি কুপ খনন আদেশ দেন। কুপ তৈরি হওয়ার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন আল্লাহ যেন এই কুপটিকে জমজমের পানির সাথে সম্পর্ক যুক্ত করেন। এরপর তিনি নিজ হাতের লাটি দিয়ে কুপের মাটিতে ইসলামী বাক্য (বিছমিল্লাহ) পড়ে আঘাত করলে সাথে সাথে কুপের মধ্যে পানি প্রবাহিত হতে লাগলো এবং সোনা ও রুপার রঙ্গের মাছের জন্ম হল। যা আজও এই কুপের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরপর উক্ত কুপের চার পাশে দেওয়াল করে কুপের উত্তর পাশে দুটি পাথর বসিয়ে দেয়ার পর পাথরের মধ্য হতে অনবরত পানি বইতে থাকে। পূর্ব কালে যে পানি লোকে বিশ্বাস ও ভক্তি করে পান করতো। আজকাল ঐ ঝরনার পানি বোতলে করে বিক্রি হয় ।

শাহ জালালের ব্যবহারিক দ্রব্যাদি

শাহ জালালের সমাধিতে সোনার কৈ, মাগুর ইত্যাদি দরগাহের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও শাহ জালালের ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্যে দরবেশের ব্যবহৃত তলোয়ার, কাঠের তৈরি খড়ম, হরিণের চাম্রা দ্বারা নির্মিত নামাজের মোসল্লা, তামার নির্মিত প্লেট এবং বাটি। উল্লেখ্য যে, তামার নির্মিত বাটি বা পেয়ালায় আরবিতে কিছু কালাম লিখিত আছে। রোগমুক্তির উছিলা হিসেবে ঐ বাটিতে পানি ঢেলে পান করলে আরোগ্য লাভ হয় বলে লোকের বিশ্বাস রয়েছে।

ভক্তি ও শ্রদ্ধা

কিংবদন্তী মতানুসারে শাহ জালাল মক্কা হতে আসার কালে তদীয় মুরশীদ কর্তৃক দেয়া এক মুঠো মাটি সঙ্গে এনেছিলেন। ঐ মাটির সাথে সিলেটের মাটির স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণ যখন মিশে গেল, স্বীয় মুরশীদের আদেশ অনুযায়ী এখানেই তিনি আস্তানা গড়েন এবং ধর্ম প্রচার করেন। সিলেটের মানুষের কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে আছেন এবং তাঁর পূণ্যময় প্রত্যেক স্মৃতি গুলো আজও অত্র অঞ্চলের মানুষ ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে মান্য করে। লোক বিশ্বাস আছে; শাহ জালালের কবর জিয়ারতের উছিলায় মনের বাসনা পূর্ণ হয়। তাই প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ তাঁর দরগাহ'তে আসা যাওয়া করে এবং তাঁকে অসিলা বা উপলক্ষ করে বিভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিলে জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা নিবেদন করে । এছাড়া বাংলাদেশের ভেতর ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রচুর বাংলাদেশী খোদার করুনা হিসেবে মান্য করে।[৪] বাংলাদেশ সহ বিদেশেও শাহ জালালের নামে অগণিত প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, হোস্টেল, শহর, দোকান ও বাজার ইত্যাদির নাম করণ করা হয়েছে। এভাবেই তাঁর ভক্তরা ভক্তি ও শ্রদ্ধা ভরে শাহ জালালের সিলেট আগমনকে উপলক্ষ করে তাঁর স্মৃতিকে যুগের পর যুগ স্মরণে ধারণ করে আসছেন। তাঁর স্মরণে লিখা হয়েছে অগণিত পুথিপুস্তক, গজল, কবিতা ও গান।

রাতারগুল জলাবন

রাতারগুল জলাবন বা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট (ইংরেজি: Ratargul Swamp Forest) বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, যা সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত। বনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর, আর এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটি পৃথিবীর মাত্র কয়েকটি জলাবনের মধ্যে অন্যতম একটি। এই বনকে বাংলাদেশ সরকারের বনবিভাগের অধীনে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

চিরসবুজ এই বন গুয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত এবং চেঙ্গির খালের সাথে একে সংযুক্ত করেছে। এখানে সবচেয়ে বেশি জন্মায় করচ গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম- Millettia pinnata)। বর্ষাকালে এই বন ২০–৩০ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। বাকি সারা বছর, পানির উচ্চতা ১০ ফুটের মতো থাকে। বর্ষাকালে এই বনে অথৈ জল থাকে চার মাস। তারপর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে-চলা পথ। আর তখন পানির আশ্রয় হয় বন বিভাগের খোঁড়া বিলগুলোতে। সেখানেই আশ্রয় নেয় জলজ প্রাণীকুল।

অবস্থান

ওয়াচ টাওয়ার থেকে জলাবনের দৃশ্য। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে, গুয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বনের অবস্থান। বনের দক্ষিণ দিকে আবার রয়েছে দুটি হাওর: শিমুল বিল হাওর ও নেওয়া বিল হাওর। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার।

নামকরণ

সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটি গাছ "রাতা গাছ" নামে পরিচিত। সেই রাতা গাছের নামানুসারে এ বনের নাম রাতারগুল।

জলবায়ু

সিলেটের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত ক্রান্তীয় জলবায়ুর এই বনটিতে প্রতিবছর ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে । বনের সবচাইতে কাছে অবস্থিত সিলেট আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্যমতে এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪১৬২ মিলিমিটার । জুলাই মাসটি সবচাইতে আর্দ্র যখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১২৫০ মিলিমিটার, অন্যদিকে বৃষ্টিহীন সবচাইতে শুষ্ক মাসটি হল ডিসেম্বর । মে এবং অক্টোবরে গড় তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ৩২° সেলসিয়াসে, আবার জানুয়ারিতে এই তাপমাত্রা নেমে আসে ১২° সেলসিয়াসে । ডিসেম্বর মাসে এখানকার আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ প্রায় ৭৪ শতাংশ, যা জুলাই-আগষ্টে ৯০ শতাংশেরও বেশি ।

উদ্ভিদবৈচিত্র্য

বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এই মিঠাপানির জলাবনটিতে উদ্ভিদের দু'টো স্তর পরিলক্ষিত হয়। উপরের স্তরটি মূলত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ নিয়ে গঠিত যেখানে নিচের স্তরটিতে ঘন পাটিপাতার (মুর্তা) আধিক্য বিদ্যমান । বনের উদ্ভিদের চাঁদোয়া সর্বোচ্চ ১৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । এছাড়াও অরণ্যের ৮০ শতাংশ এলাকাই উদ্ভিদের আচ্ছাদনে আবৃত । বনের স্বাস্থ্য সন্তোষজনক । এখন পর্যন্ত এখানে সর্বমোট ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে ।

এই বন মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও পরবর্তিতে বাংলাদেশ বন বিভাগ, বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ আর বরুণ গাছ; আছে পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম, গুটিজাম। আছে বট গাছও।

প্রাণিবৈচিত্য

জলমগ্ন বলে এই বনে সাঁপের আবাস বেশি, আছে জোঁকও; শুকনো মৌসুমে বেজিও দেখা যায়। এছাড়া রয়েছে বানর, গুঁইসাপ; পাখির মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি। শীতকালে রাতারগুলে আসে বালিহাঁসসহ প্রচুর পরিযায়ী পাখি, আসে বিশালাকায় শকুনও। মাছের মধ্যে আছে টেংরা, খলিশা, রিটা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউশ, রুইসহ বিভিন্ন জাত।

পর্যটন আকর্ষণ

জলে নিম্নাংঙ্গ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এখানে ভিড় করেন পর্যটকগণ। বনের ভিতর ভ্রমণ করতে দরকার হয় নৌকার, তবে সেগুলো হতে হয় ডিঙি নৌকা— ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় প্রকৃতির রূপসুধা। তবে বনে ভ্রমণ করতে অনুমতি নিতে হয় রাতারগুল বন বিট অফিস থেকে।

লালাখাল

স্বচ্চ নীল জল রাশি আর দুধারের অপরুপ সোন্দর্য, দীর্ঘ নৌ পথ ভ্রমনের সাধ যেকোন পর্যটকের কাছে এক দূর্লভ আর্কষণ। তেমনি এক নির্জন মনকাড়া স্থান লালাখাল। বাংলাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্ঠিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্যে ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। সারি নদীর স্বচ্চ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালা খালে। যাবার পথে আপনির দুচোখ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন কিন্ত সৌন্দর্য শেষ হবে না। ৪৫ মিনিট যাত্রা শেষে আপনি পৌছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরী ঘাটে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন নদীর পানির দিকে। কি সুন্দর নীল, একদম নীচে দেখা যায়। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত।

কিভাবে যাওয়া যায়
সিলেট শহর হতে লালাখাল যাবার জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ৩৫ কি.মি রাস্তা। আপনি অনেক ভাবে লালাখাল যেতে পারেন। বাস, মাইক্রো, টেম্পু যোগে আপনি যেতে পারেন।

জাকারিয়া সিটি
দেশে শীত অর্থাৎ বেড়ানোর মৌসুম শুরু হয়েগেছে। এখন ভ্রমণকারীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রচুর। দেশেতো বটে বিদেশে ও প্রতিবছর বেড়াতে যাওয়ার মতো বাংলাদেশীদের আর্থিক সংগতি হয়েছে অনেক আগে। দেশে যারা ভ্রমণ করেন তাদের অনেকেই এবারে সিলেট ভ্রমণে আসবেন। সিলেট ভ্রমণে দু’টি মাজারসহ মূলত টার্গেট থাকে জাফলং আর মাধবকুন্ড দর্শনের। সিলেটে এসে যেখানে থাকবেন সেটাও যদি হয় দেখার মতো, সময় কাটানোর মতো কিছু? কেমন হয়? তেমন’ই চমৎকার প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ করে দিয়েছি জাকারিয়া সিটি।
সিলেট শহর থেকে প্রায় ১১ কিমি দূরে জাফলং রোডে খাদিমনগরে ৩টি টিলার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই সিটি। প্রায় ১৭ একরের এই হলিডে রিসোর্টে রয়েছে থ্রিস্টার মোটেল, শিশুপার্ক, অডিটোরিয়াম, মিনি চিড়িয়াখানা ইত্যাদি ইত্যাদি। প্যাকেজট্যুরে জাফলং, মাধবকুন্ড, শ্রীমঙ্গল, ছাতক, হাওর ও মাজারে ভ্রমণের ব্যবস্হা আছে। দিন প্রতিরুম ভাড়া বাবদ খরচ হবে ২৮৫০/- থেকে ১২৬০০/- টাকা। এই কারণে শিরোনাম কিছুটা আয়েসী ভ্রমণ।

ঠিক আছে। আপনার কাছে কি এই আয়োজন বেশী আয়েসী হয়ে যাচ্ছে থাকতে না পারলে কি দেখতে পারবেন না। সমস্যানেই। মাত্র৫০/- টাকা জনপ্রতি টিকেট কেটে আপনি পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন। আর শিশুরা সাথে থাকলে তাদের আনন্দটা হবে সীমাহীন।

রংপুর বিভাগ
দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি
সমারোহের মাঝে প্রায় ৮০ একর সম্পত্তির উপর ইতিহাসখ্যাত প্রজা হিতৈষী জমিদার দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ী । রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলা কার্যালয় ও পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনের অনতিদুরে এ জমিদার বাড়ি অবস্থিত। পীরগাছার স্থানীয় লোকজন মন্থনার জমিদার বাড়িকে রাজবাড়ি বলে ডাকে। রাজবাড়ির চারি দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দৃষ্টি নন্দিত ছোট বড় অনেক পুকুর ।বাড়ির পিছনে ইতিহাসের কালের সাক্ষী হয়ে কোনমতে বেঁচে আছে দেবী চৌধুরানীর খননকৃত ঢুসমারা খাল অর্থাৎহঠাৎবা অকষ্মাৎসৃস্টি ।দেবী চৌধুরানী এ খাল দিয়ে নৌকাযোগে নদী পথে বিভিন্ন গোপন অবস্থায় যাতায়াত করতেন । বিশাল এলাকা নিয়ে ছড়ানো ছিটানো এ রাজবাড়ির অসংখ্য দালান আজ ধ্বংসপ্রায়। দালানের ইট,পাথর ও সুড়কি খুলে পড়েছে ।
দেয়ালের জীর্ণতা ও শেওলার অাঁচড়ে পরগাছা জন্মেছে । ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ির নাট্য মন্দির ও কাচারী ঘরটি বর্তমানে পীরগাছা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজবাড়ির ভিতরে নির্মিত প্রাচীন মন্দিরগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়ন রায় কর্তৃক নির্মিত অপূর্ব কারুকার্য মন্ডিত দেড় শতাধিক বছরের পুরানো দৃষ্টি নন্দিত ত্রিবিগ্রহ মন্দির ধ্বংসের অপেক্ষায় দিন গুনছে ।
এখানে অন্নপুর্ণ বিশেশ্বর, শিব ও হরিহর তিনটি বিগ্রহ এক মন্দিরের পাশাপাশি কক্ষে স্থাপন করা রয়েছে ।বাংলার মন্দির দাম্পত্য ইতিহাসে এক অনন্য বিরল দৃষ্টান্ত । ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও তাদের এদেশীয় অনুচর দেবী সিং এর অবর্ণনীয প্রজা পীড়নের বিরুদ্ধে তৎকালীন ভারতবর্ষে প্রথম যে নারী অস্ত্র হাতে রক্তক্ষয়ী ফকির সন্যাসী ও ১৭৮৩ সালে রংপুরর প্রজা বিদ্রোহের নেতৃতে দিযেছিলেন সেই কিংবদন্তির অগ্নিকন্যা ছিলেন পীরগাছার মন্থনা জমিদার। মন্থনা জমিদার দেবী চৌধুরানীর আসল নাম ছিল ‘‘জয়াদুর্গা দেবী চৌধুরানী’’। সাহিত্য সম্রা্ট বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় তার রচিত আনন্দমঠ ও দেবী চৌধুরানীর নামে দু’খানা বই রচনা করেছিলেন। এখানে প্রতি বছর হিন্দু সম্প্রদায় পূজা পার্বন পালন করেন।
এ ছাড়াও এখানে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন অনুষ্ঠানাদি পালন কওে থাকেন। মড়হনা জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়নের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ১৯২৮খ্রিঃ একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা পরে তার নামানুসারে জে এন উচ্চ বিদ্যালয় নাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় সমাজসেবীদের প্রচেষ্টায় মন্থনা জমিদার রাজবাড়ী নামে রাজবাড়ী স্কুল প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক মন্থনা জমিদার প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়ীর সহানসমূহকে ঘিরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা সহজ হবে ।



পায়রা বন্দর
বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া খাতুন (বেগম রোকেয়া)-এর পৈত্রিক বাড়ি পায়রাবন্দ।এই মহীয়সী নারী জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর এখানেই এই পায়রাবন্দ গ্রামে। সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের এর ঘড়ের জন্ম উনার। তাঁর মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী।পায়রাবন্দ রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন। রংপুর সদর হতে খুব সহজেই রিকসা বা ব্যাটারী চালিত অটোতে এখানে ঘুরে আসা যায়। বা আপনি ইচ্ছা করলে বাসেও আসতে পারেন। যারা কোন কাজে নিজস্ব পরিবহনে রংপুর যাচ্ছেন বা রংপুর হতে গাইবান্ধা-বগুড়া রোডে ফিরে আসছেন, তারা ইচ্ছে করলেই এই বিখ্যাত স্থানটি ঘুরে আসতে পারে মাত্র ১৫-২০ মিনিটে। খুন ভালো কাটবে সময়টা।
এখানেই রয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ কার্যলয়, পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গণকেন্দ্র পাঠাগার ও রোকেয়া কলেজ। উনার বাড়ির পাশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি গেস্ট হাউজ ও বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে বাংলাদেশ সরকার একটি গণউন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। উনার পৈতৃক ভিটায় ৩ দশমিক ১৫ একর ভূমির ওপর নির্মিত হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। এতে অফিস ভবন, সর্বাধুনিক গেস্ট হাউজ, ৪ তলা ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি ইত্যাদি রয়েছে।
স্মৃতিকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়।দুটি ভবন রয়েছে। একটি প্রশাসনিক আর অপরটি মূল ভবন। মূলত এটি “বিকেএমইএ” এর ট্রেনিং ইনস্টিউট। এখানে প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন ট্রেনিং দেয়া হয়। বিকেএমই নামে ট্রেনিং সেন্টারে তরুণদের প্রশিক্ষদেওয়া হয়। তারপর বিভিন্ন জায়গায় তাদের কর্মসংস্হানের ব্যবস্থা করা হ্য়। সম্পূর্ণ বিনা খরচে যে কেউ এখান থেকে বিভিন্ন হাতের কাজের ট্রেনিং নিতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যপার হল এখানে থাকার জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা আছে।কম্পাউন্ডের ভিতরে ঢুকে এগিয়ে গেলেই বেগম রোকেয়ার পিতলের চকচকে একটি ভাষ্কর্য/মূর্তি চোখে পড়বে।অনেক বড় জায়গা নিয়ে এই স্মৃতিকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বাহিরটা অনেক সাজানো-গোছানো এবং পরিষ্কার। খুব সুন্দর সাজানো বাগান আছে যা আপনার মন কেড়ে নেবে।

বর্তমানে পৈত্রিক বাড়িটির আর কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই, শুধুমাত্র বিলুপ্তপ্রায় কিছু ইটের দেয়ালের গাথুনি ছাড়া। আসলে ওটাকে বাড়ি বলা ভুল হবে। ওটা একটা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ।মূল বাড়ির অংশটি বর্তমানে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেয়া, অবশ্য যেকেউ ইচ্ছে করলেই সেখানে প্রবেশ করতে পারেন। গেতে তালা দেওয়া থাকে। একজন কেয়ারটেকার আছেন উনাকে খুঁজে বের করে ভিতরে ঢুকতে পারবেন। আরও রয়েছে বেগম রোকেয়া ক্রাফটস যেখানে আপনি পাবেন ভূমিহীন ও দুস্থ মহিলাদের তৈরী (মূলতঃ পাটজাত) বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী। তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তাঁর বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদেরকে ঘরে আরবী ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও করিমুননেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান।
১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। বিয়ের পর তিনি ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামে পরিচিত হন। তাঁর স্বামী মুক্তমনা মানুষ ছিলেন, রোকেয়াকে তিনি লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন এবং একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন। রোকেয়া সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্যজগতে পদার্পণ করেন। ১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন।
এছাড়াও, মহিয়সী বাঙালি নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদানকে চীরস্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসনের জন্য “রোকেয়া হল” নামকরণ করা হচ্ছে ।

ভিন্ন জগৎ
রংপুরের ভ্রমণ স্পটগুলোর একটি। এই জগতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ আপনাকে মুক্তি দেবে যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততা থেকে। রংপুরের ভ্রমণ স্পটগুলোর মধ্যে ভিন্ন জগৎ অন্যতম। এটি রংপুরের সবচেয়ে বড় পিকনিক স্পট ও পর্যটনকেন্দ্র। রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার গঙ্গীপুরে এর অবস্থান। টিকেট কেটে পার্কে প্রবেশের পর লোহার ব্রিজ, তা পেরোলেই জগৎটা ভিন্ন হয়ে যায়। ভিন্ন জগতের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম প্লানেটেরিয়াম। প্লানেটেরিয়ামে ঢোকার পর আপনি হারিয়ে যাবেন গ্রহ-নক্ষত্রের ভিড়ে। জানতে পারবেন ‘মহাবিস্ফোরণ বা বিগব্যাং’-এর মাধ্যমে পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ভিন্ন জগতে দেখতে পাবেন পিকনিকের জন্য কটেজ, পাখিদের অভয়ারণ্য, শপিংমল, ৫০০ আসনবিশিষ্ট আধুনিক কনফারেন্স কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, স্কিল টেস্ট রোবট জোন ও সুইমিংপুল।
আরো রয়েছে শিশু-কিশোরদের জন্য শিশুকানন, মেরিগো রাউন্ড, হেলিকপ্টার ফ্লাইজোন, নাগরদোলা, ক্যাঙ্গারু মুভিং, স্পাইডার জোন, বাম্পার কার, রেসিং হর্স, সি-প্যারাডাইস, মকি ট্রেন, জলতরঙ্গ, আজব গুহা, থ্রিডি মুভি, বরফের দেশ, স্পেস জার্নি, শাপলা চত্বর, বীরশ্রেষ্ঠ ও ভাষাসৈনিকদের ভাস্কর্য এবং বিশাল আকৃতির নিজস্ব লেকে নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা। বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ভিন্ন জগতে কনসার্টসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ভিন্ন জগতে রয়েছে একটি তথ্যকেন্দ্র, যা পর্যটকদের বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে ও হারানো জিনিস খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে রংপুর যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো পরিবহন হলো গ্রিনলাইন ও টি আর ট্রাভেলস। এ ছাড়া এ রুটে আগমনী পরিবহন, এসআর, শ্যামলী, হানিফ, কেয়া ইত্যাদি পরিবহনের সাধারণ বাস চলাচল করে। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ছাড়ে এসব বাস। সড়কপথ ছাড়াও রেলপথে রংপুর যাওয়া-আসা সম্ভব। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য শহর থেকেও রংপুর যাওয়ার জন্য ভালো পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে। রংপুর মেডিকেল মোড় থেকে খুব সহজেই বাস অথবা অটোতে করে যাওয়া যায় ভিন্ন জগৎ। বাসে গেলে পাগলা পীর এলাকায় নেমে আবার অটো নিতে হবে ভিন্ন জগতের উদ্দেশে। রংপুরের পাগলা পীর থেকে ভিন্ন জগতের ফটক পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা।
ভিন্ন জগতে গাড়ি পার্কিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের জন্য বিভিন্ন মূল্য পরিশোধ করে গাড়ি পার্ক করা যায়। ভিন্ন জগৎ বছরজুড়েই সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। পার্কে প্রবেশের মূল্য ৫০ টাকা। প্রতিটি রাইডের টিকেট মিলবে জনপ্রতি ৫ থেকে ৩০ টাকায়।
কারমাইকেল কলেজ
বাংলার গভর্নর লর্ড ব্যারন কারমাইকেলের দ্বারা ১৯১৬ সালে কারমাইকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্নে রংপুরের কিছু শীর্ষস্থানীয় জমিদার গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখে। তারা ৩০০ একর জমিতে কলেজ ভবন নির্মানের জন্য ৭৫০০০০ টাকা সংগ্রহ করে। জার্মান নাগরিক ড. ওয়াটকিন ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ। ৬১০ ফুট লম্বা ও ৬০ ফুট প্রশস্ত কলেজ ভবন যা বর্তমান বাংলা বিভাগ জমিদারি স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন।
যা বাংলার সমৃদ্ধশালী ইতিহাস মোঘলীয় নির্মান কৌশলকে মনে করিয়ে দেয়। কারমাইকেল কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯১৭ সালে কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক চালু করা হয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান ১৯২২ সালে ও বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ১৯২৫ সাল থেকে শুরু হয়। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল. দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৫৩ সালে নতুনভাবে স্থাপিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন করা হয় যা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর কারমাইকেল কলেজ ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়।

ক্যাম্পাস
৭০০ একর ভূমির উপর অবস্থিত কারমাইকেল কলেজের সুবিশাল ক্যাম্পাস। ছায়া সুনিবিড় এই বিশাল প্রাঙ্গনে একটি ক্যান্টিন, একটি সুদৃশ্য মসজিদ, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হল,বিভিন্ন বিভাগীয় ভবনএবং বিশাল দুটি খেলার মাঠ। ক্যাম্পাসের দক্ষিণে রংপুর ক্যাডেট কলেজ, উত্তরে রংপুর রেল স্টেশন ও ঐতিহ্যবাহী লালবাগ হাট-বাজার এবং চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছাত্রাবাস।


তাজহাট জমিদারবাড়ী
তাজহাট জমিদারবাড়ী ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক। ঐতিহাসিক প্রাসাদটিকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস। দেশের সুবিশাল ও অনন্য সুন্দর স্থাপনাগুলোর মধ্যে তাজহাট জমিদারবাড়ী অন্যতম। বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য এটি আকর্ষণীয় স্থান। ঐতিহাসিক সংগ্রহশালার প্রাসাদটি ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। অপূর্ব স্থাপত্যিক নিদর্শন আর জমিদারবাড়ীর ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি জড়িয়ে থাকা ইতিহাস সংবলিত তাজহাট জমিদারবাড়ীটি চমত্কার একটি দর্শনীয় স্থান। তাজহাট জমিদারবাড়ী ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক।
ঐতিহাসিক প্রাসাদটিকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস। দেশের সুবিশাল ও অনন্য সুন্দর স্থাপনাগুলোর মধ্যে তাজহাট জমিদারবাড়ী অন্যতম। স্থাপত্যশৈলীতে ঢাকার আহসান মঞ্জিলের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে। বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। রংপুর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে তাজহাট গ্রামে অবস্থিত। প্রাসাদটি বিংশ শতাব্দীর মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় নির্মাণ করেন। মহারাজা গোপাল রায় ছিলেন হিন্দু ধর্মের অনুসারী এবং একজন স্বর্ণকার ব্যবসায়ী। পর্যটকদের জন্য এটি আকর্ষণীয় স্থান। ঐতিহাসিক সংগ্রহশালার প্রাসাদটি ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করবে।উত্তরবঙ্গের রংপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অন্যতম স্মারক তাজহাট জমিদারবাড়ী। যদিও তাজহাট এখন পরিচিত জমিদারবাড়ীটির জন্য কিন্তু অতীতে তাজহাট বিখ্যাত ছিল সুন্দর ‘তাজ’ বা মুকুটের কারণেই। এ ‘তাজ’ ভারতবর্ষের প্রায় সব রাজা ও জমিদারের কাছে ছিল প্রিয়। প্রাসাদটিতে অসংখ্য পুরাকীর্তি ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন রয়েছে। তাজহাট জমিদারবাড়ীর ওই প্রাসাদটি প্রায় ২১০ ফুটের মতো প্রশস্ত ও চার তলার সমান উঁচু। এর গঠনশৈলী প্রাচীন মুঘল স্থাপত্যের মতো। প্রাসাদের মধ্যখানে বিশাল একটি গম্বুজ ও দুই পাশে ছড়িয়ে থাকা প্রধান ইমারতের উত্তর অংশের মাঝামাঝি ২য় তলায় ওঠানামার জন্য সুন্দর কাঠের তৈরি ২২টি ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি রয়েছে।

এ ছাড়া প্রাসাদটির পেছনের দিক থেকে ২য় তলায় ওঠানামার জন্য লোহার নকশাকৃত ঝুলন্ত মজবুত সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়িগুলোর রেলিং দেখতে অসম্ভব সুন্দর। ফুলগাছের মতো দেখা যায়। প্রাসাদটির সামনে থেকে ২য় তলায় ওঠানামার জন্য একটি বিরাট গ্যালারির মতো সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়িটিকে তিনটি স্তরে বিভক্ত দেখা যায়। প্রথম স্তরে ১টি ধাপ বিরাজমান, ২য় স্তরে ওঠার সময় একটু সমান অবস্থান নেমে আবার ১৪টি ধাপ অতিক্রম করে একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন আয়তাকার প্লাটফরম, যা দ্বিতীয় তলার ছাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যাকে ৩য় স্তর হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। দালানগুলো দেখতে একটা মসজিদের অবয়ব। তবে রাজবাড়ী যেই দিক থেকে বাংলাদেশের অন্য সব প্রাসাদের থেকে আলাদা তা হলো এর সিঁড়িগুলো। সর্বমোট ৩১টি সিঁড়ি আছে, যার প্রতিটাই ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথরে তৈরি। সিঁড়ি থেকে উঠে জাদুঘর পর্যন্ত পুরোটাই একই পাথরে তৈরি। ঐতিহাসিক এই জমিদারবাড়ীটির ইতিহাস বেশ বৈচিত্র্যময়। কথিত আছে মহারাজা গোবিন্দ লালের পুত্র গোপাল লাল তাজহাট জমিদারবাড়ীটির নির্মাতা। মূলত এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা মান্নানলাল রায় সুদূর পাঞ্জাব থেকে রংপুরের বিশিষ্ট সমৃদ্ধ স্থান মাহিগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসা করার জন্য এসেছিলেন। গোবিন্দলাল ১৮১৯ সালে জমিদারবাড়ীর উত্তরাধিকারী হন। তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা ও খুব জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। তার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অবদানের জন্য ১৮৮৫ সালে ‘রাজা’, ১৮৯২ সালে ‘রাজা বাহাদুর’, ১৮৯৬ সালে ‘মহারাজা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি এখানে হীরা, জহরত এবং স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসা করতেন। প্রথমে তিনি নানা ধরনের নামিদামি হীরা, মানিক জহরতখচিত তাজ বা টুপির ব্যবসা করেছেন। ওই তাজ বিক্রির লক্ষ্যে এখানে হাট বসে, যা পরবর্তীতে বিরাট প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তার এ ব্যবসায়ের প্রসারের ফলে এখানে হীরা-জহরতের হাট বসত। এ তাজ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জমিদারবাড়ীর নামকরণ করা হয় তাজহাট জমিদারবাড়ী। প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে চমত্কার এই স্থাপনা তৈরিতে।

জাদুঘর
১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে সরিয়ে এ প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসে। তাজহাট জমিদারবাড়ীর প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে বিশাল খালি মাঠ, গাছের সারি এবং প্রাসাদের দুই পাশে রয়েছে দুটি পুকুর। মার্বেলের সিঁড়ি বেয়ে জাদুঘরে উঠলেই রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী কক্ষ, যাতে রয়েছে দশম ও একাদশ শতাব্দীর টেরাকোটা শিল্পকর্ম। এ ছাড়া এখানে বিভিন্ন হস্তলিপি, পুরনো পত্রিকা, শিবপত্নী পার্বতীর মূর্তি, মাটির পাত্র, বিভিন্ন পোড়ামাটির ফলক, রাজা-বাদশাহদের ব্যবহূত জিনিসপত্র, মৃত্পাত্র, সরলা দেবীর ব্যবহূত সেগুন কাঠের তৈরি বাক্স, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন পোড়ামাটির ফলক রয়েছে এখানে। এ ছাড়াও রয়েছে নারী মূর্তি, লোহার দ্রব্যাদি, সাঁওতালদের ব্যবহূত তীর, লাল পাথরের টুকরো, পাহাড়পুর বিহার থেকে সংগৃহীত নারী মূর্তি, পাথরের নোড়া, বদনা, আক্রমণাত্মক যোদ্ধার মূর্তি। মহাভারত, রামায়ণ, গাছের বাঁকলে লেখা সংস্কৃত হস্তলিপি, তুলট কাগজে লেখা হস্তলিপি, কবি শেখ সাদী ও বাদশাহ নাসির উদ্দিনের স্বহস্তে লেখা কোরআন শরিফ এবং ছোট্ট কোরআন শরিফও রয়েছে।

ভ্রমণ পিপাসুদের জেনে রাখা প্রয়োজন কখন জমিদারবাড়ীটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তাজহাট জমিদারবাড়ী গ্রীষ্মকালে বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এ ছাড়া রবিবার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবসসহ সরকারি সব ছুটির দিনে জমিদারবাড়ী জাদুঘর বন্ধ থাকে। প্রাসাদ চত্বরে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চাইলে গাড়ির জন্যও নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।

অবস্থান
তাজহাট রাজবাড়ী বাতাজহাট জমিদারবাড়ী বাংলাদেশের রংপুর শহরের অদূরে তাজহাট গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। রংপুরের পর্যটক ছাড়াও সারা দেশের অসংখ্য পর্যটকের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান। রাজবাড়ীটি রংপুর শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।


রামসাগর
রামসাগর দিনাজপুর জেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত মানবসৃষ্ট দিঘি। এটি বাংলাদেশে মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় দিঘি। তটভূমিসহ রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার। দীঘিটির পশ্চিম পাড়ের মধ্যখানে একটি ঘাট ছিল যার কিছু অবশিষ্ট এখনও রয়েছে। বিভিন্ন আকৃতির বেলেপাথর স্ল্যাব দ্বারা নির্মিত ঘাটটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিল যথাক্রমে ৪৫.৮ মিটার এবং ১৮.৩ মিটার। দীঘিটির পাড়গুলো প্রতিটি ১০.৭৫ মিটার উঁচু ।
অবস্থান
দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার (৮,০০০ মি) দক্ষিণে তাজপুর গ্রামে দীঘিটি অবস্থিত।
ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের মতে, দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ (রাজত্বকাল: ১৭২২-১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ) পলাশীর যুদ্ধের আগে (১৭৫০-১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে) এই রামসাগর দিঘি খনন করেছিলেন। তাঁরই নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় রামসাগর। দিঘিটি খনন করতে তৎকালীন প্রায় ৩০,০০০ টাকা এবং ১৫,০০,০০০ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল।
লোককথা
এই দিঘি নিয়ে প্রচলিত আছে বিভিন্ন লোককথা। কথিত আছে, ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রচণ্ড এক খরা দেখা দিলে পানির অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে হাজার হাজার প্রজা। এসময় দয়ালু রাজা প্রাণনাথ স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি পুকুর খনন করেন। মাত্র ১৫ দিনে এর খনন কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু সেই পুকুর থেকে পানি না ওঠায় একসময় রাজা স্বপ্নে দৈববাণী পেলেন যে, তাঁর একমাত্র ছেলে রামকে দীঘিতে বলি দিলে পানি উঠবে। স্বপ্নাদিষ্ট রাজা, দীঘির মাঝখানে একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করেন। তারপর এক ভোরে যুবরাজ রামনাথ সাদা পোষাকাচ্ছাদিত হয়ে হাতির পিঠে চড়ে যাত্রা শুরু করলেন সেই দীঘির দিকে। দীঘির পাড়ে পৌঁছে যুবরাজ রাম সিঁড়ি ধরে নেমে গেলেন মন্দিরে। সঙ্গে সঙ্গে দীঘির তলা থেকে অঝোর ধারায় পানি উঠতে লাগল। চোখের পলকে যুবরাজ রামনাথসহ পানিতে ভরে গেল বিশাল দীঘি।
আরও একটি লোককাহিনী শোনা যায়। দিঘি খনন করার পর রাজা রামনাথ পানি না উঠলে স্বপ্ন দেখেন রাজা দিঘিতে কেউ প্রাণ বিসর্জন দিলে পানি উঠবে। তখন রাম নামের স্থানীয় এক যুবক দিঘিতে প্রাণ বিসর্জন দেয়। পরবর্তিতে রাজার নির্দেশে সেই যুবকের নামে দিঘির নামকরণ করা হয় রামসাগর।

রংপুর চিড়িয়াখানা
রংপুর জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিনোদন কেন্দ্র এই চিড়িয়াখানা। ক্লান্তবির্পযস্তও বিষন্ন মনকে সতেজ করতে এবং অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার সৌন্দর্য পিপাসু ও ভ্রমণ বিলাসীগণ বেড়াতে আসেন এই চিড়িয়াখানায়। রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রংপুর বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানা। এই বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানায় রয়েছে ২৬ প্রজাতির জীবজন্তু ও পাখুপাখালী। উলেস্নখযোগ্য সিংহ ,রয়েল বেঙ্গল টাইগার ,চিতা বাঘ, জলহসত্মী,হায়েনা, ভালুক, বানর, বেবুন, হরিণ, ময়না ,টিয়া ,ঈগল, শকুন, সারস ,বক,ঘড়িয়াল,অজগর সাপ প্রভৃতি।
এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন বনজ, ফলজ এবং ঔষুধি গাছের মনোলোভা সারি। রয়েছে নয়ানাভিরাম লেক ও শিশুপার্ক।
রংপুর বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানা মোট ২২ দশমিক ১৭ একর জমির উপর অবস্থিত ।১কোটি ৮০ লাখা ১ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯৮৮ সালের ১৪ আগস্টে এর নির্মাণ কাজশুরুহয় এবং ১৯৯৯ সালের জুন মাসে এর নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হয়। জনসাধারণের জন্য এটি উম্মুক্ত করে দেয়া হয় ১৯৯১ সালের ১৪ই জুন। এই চিড়িয়াখানা দেখা-শুনার জন্য রয়েছেন একজন ডেপুটি কিউরেটর এবং একজন জু অফিসার সহ ১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
টাউন হল
দেশের দশম সিটি কর্পোরেশন রংপুরের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী রংপুর টাউন হল। এটি শুধু একটি অডিটোরিয়াম বা হল নয় অনেক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সামাজিক গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের সূতিকাগার। রংপুর অঞ্চলের সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রাণ কেন্দ্র এই টাউন হল থেকেই অনেক ক্ষণজন্মা পুরোধা ব্যক্তিত্ব বাঙালী সংস্কৃতির মুক্ত চিন্তার পথ দেখিয়েছেন। বহু সামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কারের সাক্ষী রংপুর টাউন হল।

রংপুরের অনেক স্থাপনার সাথে মিশে রয়েছে কাকিনার রাজা মহিমা মহিমা রঞ্জন রায়ের নাম। নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশী না থাকলেও তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। শিক্ষার প্রতি অগাধ ভালবাসা থেকে অনগ্রসর বাঙালিকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরীর জন্য জমি দান করেন তিনি। এখনো রংপুর টাউন হল, কৈলাশরঞ্জন স্কুল, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী তারি মহিমার গৌরব গাথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই অঞ্চলের নাট্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকাশের জন্য ১৮৮৫ সালে তৎকালীন রঙ্গপুর নাট্য সমাজ (রংপুর ড্রামাটিক এ্যাসোসিয়েশন বা আর.ডি.এ) একটি রঙ্গ মঞ্চ বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এক্ষেত্রেও এগিয়ে আসেন কাকিনার রাজা মহিমা রঞ্জন রায়। ১৮৯১ সালে রংপুরের উৎসাহিত নাট্য সমাজকে একটি রঙ্গশালা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ১০ বিঘা ৩ কাঠা জমি ইংরেজ সরকারের বরাবরে লিখে দেন। ১৮৯৬ সালে সেক্রেটারি অফ স্টেট ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ও রংপুর নাট্য সমাজের মধ্যে যে দলিল সম্পাদিত হয়, সেই দলিল অনুযায়ী রংপুর নাট্য সমাজ তা মালিকানার অধিকারী হয়।

জমির মালিকানা লাভের পর প্রথমে এখানে একটি চালা ঘরে নাট্য চর্চার শুরু হয়। সূচনালগ্নে এর নাম ছিল "রংপুর নাট্য সমাজ গৃহ"। এই রঙ্গ মঞ্চে প্রথম নাটক হিসেবে মঞ্চস্থ হয় মধুসূদন দত্তের "শর্মিষ্ঠা"। টাউন হল ক্যাম্পাসেই রয়েছে অবিভক্ত ভারতের অন্যতম প্রাচীন লাইব্রেরিগুলির একটি রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী। যা স্থাপিত হয়েছিল ১৮৫৪ সালে। রংপুর পাবলিক লাইব্রেরীকে কেন্দ্র করেই লাইব্রেরী ভবনের একাংশে প্রতিষ্ঠিত হয় রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ যা কলকাতার বাইরে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম শাখা। পাশেই রয়েছে স্থপতি তাজ উদ্দিন চৌধুরীর ডিজাইনে করা আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব নিদর্শন রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ৭০'র দশকের শেষভাগে এই শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রংপুর অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ শংকু সমজদারের মা দীপালী সমজদার।

রংপুর টাউন হল শুধু আনন্দ, চিত্ত বিনোদন বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূতিকাগার নয়। অনেক বেদনা ও কষ্টের মিশে আছে এর সাথে । হলের ইট পাথরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে আছে ৭১ এর স্মৃতি গাথা। বীরাঙ্গনাদের আর্ত চিৎকার, গুমোট চাপা কান্না। পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় এই টাউন হলকে বানিয়েছিল 'নারী নির্যাতন' কেন্দ্র। যুদ্ধের বিভীষিকায় অসংখ্য নারী এখানে সম্ভ্রম হারিয়েছে, অনেক মুক্তিকামী মানুষকে এখানে হত্যা করা হয়েছে। আর সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতি ধারণ করে এখনও দাঁড়িয়ে আছে রংপুর টাউন হল।

কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজার
কেরামতিয়া মসজিদ সম্পর্কে আলোচনার আগে যার নামের সঙ্গে এ মসজিদটির সর্ম্পক একামত্মভাবে জড়িত তাঁর সর্ম্পকে একটু আলোকপাত করা প্রয়োজন।

১৮০০০-১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে ইসলামি সংস্কার আন্দোলনের সর্বাপেক্ষা সফলকাম ব্যক্তি ও গৌরবান্বিত ব্যক্তি মাওলানা কেরামত আলী (রাঃ) জৈনপুওে ১২১৫ হিজরী ১৮ মহরম জন্মগ্রহণ করেন। সারা জীবন তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য আত্মনিয়োগ করেন। রংপুরে তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য আসেন এবং কেরামতিয়া মসজিদে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

উলিস্নখিত মসজিদটি আয়তাকার । এর আভ্যমত্মরীন পরিমাপ৪২র্-০র্র্*১৩র্-০র্।এর পূর্ব ও পশ্চিম দেওয়ালের প্রসত্মতা ৩র্-৩র্ এবং উত্তর ও দক্ষিন দিকের দেওয়ালের প্রশসত্মতা ২র্-১০র্।সম্ভবতঃ আধুনিকায়ন ও সংস্কার হেতু পরিমাপের ক্ষেত্রে কিছুটা বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।সমতল ভূমি হতে মসজিদের উচ্চতা ১৮র্ -০র্।
মসজিদটির তিনটি (উঁচু) গোলাকার গম্বুজ বিশিষ্ট। গম্বুজগুলো অষ্টকোণী ড্রামের উপর ভর করে নির্মিত। প্রতিটি গম্বুজের নিমণাংশে মারলন অলংকরণ রয়েছে এবং গম্বুজের মধ্যবর্তী স্থানে প্রস্ফুটিত পদ্মফুলের উপওে কলসমোটিফ ফিনিয়াল বা চূড়া স্থাপিত দেখা যায়।

মসজিদটির প্রতিটি কোণে অষ্টভূজাকৃতি সত্মম্ব রয়েছে যার শীর্ষদেশে শোভা পাচ্ছে কিউপলা। এছাড়াও নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে বিভিন্ন খিলনাকৃতি ও প্যানেলের অলংকরণের পাশাপাশি ব্যান্ডের উপস্থিতিও লÿ্য করা যায়। এছাড়াও মিহরাব,খিলান ও প্রধান প্রবেশদ্বারের উভয় পাশে অষ্টকোণাকৃতি সত্মম্ভেও সন্নিবেশ দেখা যায় যার শীর্ষদেশে কিউপলা স্থাপিত রয়েছে। অপরদিকে উভয় খিলানের এবং পূর্বদিকের অপর দু’প্রবেশদ্বারের ও উলেস্নখিত দরজার (উত্তর ও দক্ষিনে কোণে অবস্থিত) উভয়দিকে ক্ষীন সত্মম্ভ (বিলা্ষ্টার) মূল দেওয়ালের সাথে যুক্ত দেখা যায়।এ সত্মম্ভগুলোর শীর্ষদেশ একামত্মাজ পত্র পলস্নব দ্বারা সুশোভিত এবং নিমণাংশও কলসাকৃতি প্রকৃতির ।

এ মসজিদেও প্যারাপেট বা ছাদের কিনারায় মারলন অলংকরণ লব্য করা যায়। প্রধান প্রবেশদ্বারগুলো চতুকৌণিক খিলনাকৃতি এবং প্রতিটি প্রবেশদ্বারের উভয় দিকেও পিলাষ্টারের সন্নিবেশ রয়েছে।
প্রতিটি প্রবেশদ্বাওে মিহরাব ও খিলানের আভ্যমত্মরীণ উদগত অংশের (ফ্রেনটনের)উপরিভাগে মারলন অলংকরণের সাথে লতাপাতা জড়ানো ফুলের নকশা দ্বারা সুশোভিত করা হয়েছে । এ মসজিদেও উত্তর ও দক্ষিনদেওয়ালে অবস্থিত কথিত দরজার কাঠামো পরিলক্ষিত হয়। সম্ভবতঃ এগুলো আলো বাতাস প্রবেশ ও বেরম্নবার জন্যই পথ হিসেবে নির্মিত হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয় । এ দরজার কাঠামেগুলোর কিয়দংশ মসজিদেও মূল দেওয়ালের বর্ধিত আভ্যমত্মরীণ উভয় ক্ষেত্রে উদগত দেখা যায় এবং শীর্ষদেশে মারলন অলংকরণ লক্ষে করা যায়।

এ মসজিদের প্রতিটি গোলাকার গম্বুজের (আভ্যমত্মরীণ) নিচে সারিবদ্ধভাবে মারলন অলংকরণ দেখা যায় এবং গম্বুজগুলো স্কুইন্স ও পেনডেনটিভ (ঝুলমত্ম) খিলানের আর্চের উপর ভর করে সুকৌশলে নির্মাণ করা হয়।
মিহরাবের বহির্কাঠামোর উপরে মারলন অলংকরণ এবং তার উভয়দিকে স্থাপিত অষ্টকোণাকৃতি সত্মম্ভগুলোর নিমণাংশও কলসাকৃতির । এ মসজিদের স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো মুঘল স্থাপত্যশৈলীকেই স্মরণ করিয়ে দেয় । মসজিদগাত্রে কোন শিলালিপি ছিল না বলে জানা যায়। ফলে সঠিক নির্মাণকাল অজ্ঞাত থেকেই যায়।

নীলসাগর
নীলসাগর একটি ঐতিহাসিক দিঘি, যা বর্তমানে নীলফামারী জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে ১৪ কিমিঃ দূরত্বে গোড়গ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত৷। মনে করা হয়, ঐতিহাসিক বৈদিক রাজা বিরাট এই দিঘি খনন করেন এবং তা বিরাট দিঘি হিসাবে পরিচিত ছিল৷ পরবর্তীকালে বিন্না দিঘি নামেও পরিচিতি পায়। স্বাধীনতার পর নীলসাগর নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে এবং বর্তমানে এখানে ব্যাপক সংস্কার করে ভ্রমণ পিপাসুদের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি শীত মৌসুমে অসংখ্য অতিথি পাখির সমাগম ঘটে এই নীলসাগরে।

অবস্থান
সদর উপজেলার জিরো পয়েন্ট চৌরঙ্গী মোড় থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা মৌজায় ৫৩.৯০ একর জমির ওপর নীলসাগরের অবস্থান। এর জলভাগ ৩২.৭০ একর, এবং চারদিকের পাড়ের জমির পরিমাণ ২১ একরের মতো।

ইতিহাস
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর কোন এক সময়ে এ জলাশয়টির খননকাজ শুরু হয়েছিল। নীল সাগর ‘বিরাট দিঘি’ ও 'বিন্না দিঘি' নামেও পরিচিত। হিন্দুশাস্ত্রমতে, খ্রিস্টপূর্ব নবম হতে অষ্টম শতাব্দীতে পান্ডবরা কৌরবদের চক্রান্তের শিকার হয়ে ১২ বছরের বনবাস ও ১ বছরের অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য হন এবং মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজধানীর এ স্থানটিতে ছদ্মবেশে বসবাস শুরু করেন। মনে করা হয়, সেসময় নির্বাসিত পাণ্ডবদের তৃষ্ণা মেটাতে বৈদিক রাজা বিরাট এ দিঘিটি খনন করেছিলেন। বিরাট দিঘির অপভ্রংশ হিসেবে কালক্রমে এ দিঘিটি বিরাট দিঘি, বিল্টা দিঘি এবং অবশেষে বিন্না দিঘি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কারো কারো মতে, রাজা বিরাট তার বিশাল গরুর পালের জন্য পানির সংস্থান করতেই এ দিঘি খনন করেন এবং তার কন্যা বিন্নাবতীর নামে এর নামকরণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে নীলফামারীর তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক ও অবসর প্রাপ্ত সচিব এম.এ জব্বার কর্তৃক এই দিঘিকে পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ও নীলফামারীর নামানুসারে বিন্না দিঘির পরিবর্তে এর নামকরণ করা হয়
নীলসাগর।

নীলসাগরের আকর্ষণ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই মূলত নীলসাগর বিখ্যাত। এর পাড়ে রয়েছে নারকেল, বনবাবুল, আকাশমণি, মেহগনি, শিশুসহ অজানা-অচেনা হরেকরকম ফুল ও ফলের সারি সারি বৃক্ষরাজি। শীতকালে বিভিন্ন দেশের রাজহাঁস, মার্গেঞ্জার, মাছরাঙা, ভুবনচিল, সবুজ চান্দি ফুটকি, বাচাল নীল ফুটকি ইত্যাদি অতিথি পাখিদের সমাগমও বৃদ্ধি পায়, এছাড়াও পাশেই রয়েছে একটি ছোট পার্ক। ১৯৯৮ সালে এ এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব রাশেদ মোশারফ এ অভয়ারণ্যের উদ্বোধন করেন।
এখানে প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে সনাতন (হিন্দু) সম্প্রদায় বারুণী স্নান উৎসবের আয়োজন করে থাকে। দিঘির পাশেই সরকারের অনুদানে একটি রেস্টহাউজ স্থাপন করা হয়েছে।


    ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন


Direct Download




শেয়ার করুন

Author:

Hi, I'm Mohon. Here, you will find the latest PDF Notes, Books and Other Educatonal Materials. You Can Download All of these Free of Cost. Thank's For being with me. Stay Tuned...

0 coment rios: